বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

খাঁটি মধুর এত গুণ!

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২২, ১২:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

খাঁটি মধুর এত গুণ!

প্রকৃত থেকে পাওয়া একটি উপাদান মধু। যা এক প্রকার মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ। মৌমাছি ফুলের নির্যাস বা রস গ্রহণ করে মৌচাকে সংরক্ষণের মাধ্যমে মধুর তৈরি হয়। অত্যন্ত সুপেয় তরল এটি। পবিত্র কোরআন থেকে শুরু করে চিকিৎসাবিদ্যা- সবখানেই মধুর নানা উপকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। স্বাস্থ্যের নানা সমস্যার সমাধান মেলায় এই পদার্থটি। মধুর নানা উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে মধুর ব্যবহার বেশ পুরনো। নানা রোগের ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। এমনকি পৃথিবীর অনেক হাসপাতালে ক্ষত সারাতে প্রাকৃতিক এই উপাদানটির ব্যবহার দেখা যায়। তবে পাস্তুরিত মধু নয়, প্রাকৃতিক মধুতেই বিদ্যমান সব উপকারিতা। 


বিজ্ঞাপন


প্রাকৃতিক মধুর পুষ্টিগুণ 

নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে মধুতে। এতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। সাধারণত, এক টেবিল চামচ মধুতে ৬৪ ক্যালোরি এবং ১৭ গ্রাম চিনি থাকে। এতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশ মন্টোজ। এছাড়াও থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ শতাংশ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন থাকে না। 

honeyমধুতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ফসফরাস, পটাসিয়াম, রিবোফ্লাভিন এবং দস্তার মতো উপকারি সব উপাদান বিদ্যমান থাকে। 

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস 


বিজ্ঞাপন


প্রাকৃতিক মধুতে উদ্ভিজ্জ রাসায়নিকের একটি শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফল বা সবজির মতোই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেলে এতে। দেহের জন্য এই উপাদানটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহ কোষের ক্ষতি সামলায়। এটি ত্বকে বয়স্কের ছাপ পড়তে দেয় না। 
গবেষণায় দেখা যায়, প্রাকৃতিক মধুতে পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগগুলির প্রদাহ-বিরোধী প্রভাব রয়েছে। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। 

ক্ষত নিরাময় করে

২০১৮ সালের এক গবেষণা পর্যালোচনায় দেখা গেছে মধুতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ২০১৭ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, মধু, প্রোপোলিস এবং রয়্যাল জেলি মাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ এবং ক্ষত নিরাময়ে উপকারি ভূমিকা রাখে। 

honeyরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে মধু। এটি শরীরের ভেতরে-বাইরে কোনোরকম ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করে। নিয়মিত মধু খেলে নানা সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যায়। 

ওজন কমায়  

নিয়মিত মধু খেলে পাকস্থলীতে বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি হয়। এতে মেদ কমানোর হরমোন নিঃসরণের জন্য বেশি মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করে। ফলে দ্রুত ওজন কমে। 

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায় 

যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য উপকারি একটি পথ্য মধু। সকালে খালি পেটে খাঁটি মধু গরম পানি দিয়ে খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। মুখের টক ভাব দূর হয়। 

honeyঅনিদ্রা সমস্যায়

অনিদ্রা সমস্যায় ভুগলে মধু খেতে পারেন। রাতে নিয়মিত মধু খেলে গভীর ঘুম হয়। 

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে 

মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এই উপাদানটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি ডায়রিয়া সারাতেও উপকারি ভূমিকা রাখে। ভোরবেলা ১ চামচ খাঁটি মধু খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয়। 

হজমে সহায়তা

মধুতে থাকা শর্করা সহজেই হজম হয়। কারণ, এতে থাকা ডেক্সট্রিন সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে। পেটরোগা মানুষের জন্য মধু বিশেষ উপকারী।

honeyরক্তশূন্যতা কমায় 

রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে মধু। তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এটি বেশ উপকারি। মধুতে থাকে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ। রক্তের হিমোগ্লোবিনের যা উপকারি। 

শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে

ফুসফুসের যাবতীয় রোগ সারাতে মধুর জুড়ি নেই। অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগী নাকের কাছে মধু ধরে শ্বাস টেনে নিলে স্বাভাবিক ও গভীরভাবে শ্বাস নিতে পারবেন। অনেকের মতে এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ উপকারি। 

মুখের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য রক্ষায়

দাঁতের ওপর মধু লাগালে ক্ষয়রোধ হয়। এটি দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে। মধু দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। মুখে ঘায়ের জন্য গর্ত সৃষ্টি হলে তা সারাতে সাহায্য করে এটি। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে দূর হয় মাড়ির প্রদাহ। 

honeyশরীর গরম রাখতে

শীতকালে শরীর গরম রাখতে ভরসা রাখুন মধুতে। এক অথবা দুই চা–চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় 

চোখের জন্যও ভালো পথ্য এটি। গাজরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।

তারুণ্য ধরে রাখে 

তরুণ থাকতে কে না চান? তারুণয় ধরে রাখতে মধু খান। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও তারুণ্য বাড়ায়।

honeyহাড় ও দাঁত গঠনে 

মধুতে রয়েছে ক্যালসিয়াম। এই উপাদানটি দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে। নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়

উচ্চ রক্তচাপে ভুগলে এক চামচ রসুনের রসের সঙ্গে দুই চামচ মধু মিশিয়ে খান। দিনে দুই বার এই পথ্যটি সেবন করুন। নিয়মিত খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমবে। সকালে খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে খেতে হবে। 

রক্ত পরিষ্কার করে 

এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। রোজ খালি পেটে এই মিশ্রণ পান করলে রক্ত পরিষ্কার হবে। এতে রক্তনালিগুলোও পরিষ্কার হবে। 

honeyএছাড়া নিয়মিত মধু খেলে গলার স্বরের উন্নতি হয়। সর্দি-কাশির মতো সংক্রামক রোগ থেকে মুক্তি দেয় এটি। রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার বেশ পুরনো। তবে বাজারের বোতলজাত মধু নয়, উপকার থেকে খাঁটি প্রাকৃতিক মধু খেতে হবে। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর