বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় একটি ফুল টিউলিপ। বাগানের সৌন্দর্য বাড়াতে আর ফুলের তোড়ার শোভা বৃদ্ধির জন্য নয়নাভিরাম ফুলটি অত্যন্ত প্রিয়। অনেকটা কাপের মতো আকৃতির বড় পাপাড়িযুক্ত টিউলিপের রঙের যেন শেষ নেই। হালকা ও গাঢ় অসংখ্য রঙে ফোটে এটি। বিচিত্র ও সহজলভ্য মনমাতানো রঙের বাহারের জন্য সবার কাছেই ফুলটি সমাদৃত।
টিউলিপ লিলিয়াসিয়ে ববা লিলি পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। এটি টবে, বাগানে কিংবা বাণিজ্যিকভিত্তিতে জমিতেও চাষ করা হয়। হাজারো সংকরায়ণ রয়েছে টিউলিপের। তবে সকল প্রজাতিকেই টিউলিপ নামে ডাকা হয়। এর ইংরেজি নাম Tulip। বৈজ্ঞানিক নাম Tulipa।
বিজ্ঞাপন

টিউলিপ মূলত বর্ষজীবী ও বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত। প্রজাতিভেদে এর উচ্চতা ৪ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রজাতিভেদে টিউলিপের ডাঁটায় সাধারণত দুই থেকে ছয়টি পিত রঙা পাতা থাকে। অধিকাংশ টিউলিপই ডাঁটা থেকে একটিমাত্র মুকুলের মাধ্যমে বিকশিত হয়। তবে কিছু প্রজাতিতে কয়েকটি ফুলও হতে পারে।
আরও পড়ুন- ছাতিম ফুলের ঘ্রাণে মাতাল শহর-বন্দর-গ্রাম
জমকালো ও আড়ম্বরপূর্ণ ফুলগুলো সাধারণত কাপ কিংবা তারার আকৃতি হয়ে থাকে। এই ফুলের তিনটি পুষ্পদল এবং তিনটি বহিঃদল রয়েছে। তাই এর অভ্যন্তরীণ ভাগ গাঢ় রঙের দেখায়। গাঢ় নীলাভ রঙ ব্যতীত প্রায় সব রঙের টিউলিপই পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন

টিউলিপ কন্দজাতীয় উদ্ভিদ। অর্থাৎ এর মূল আদা বা হলুদের মতো। এটি টিউলিপের বীজ হিসেবে বিবেচিত। কম বয়সী উদ্ভিদ টিউলিপ। গাছ জন্মের পর থেকে ফুল ফুটে ঝরে যাওয়া পর্যন্ত এদের আয়ুষ্কাল খুবই ক্ষণস্থায়ী। সব মিলিয়ে এদের জীবনচক্র মাত্র মাস দেড়েকের মতো হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন- অবহেলিত এই ফুলের এত উপকারিতা!
পৃথিবীর উত্তর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত পুরানো দিনের ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলো থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত এলাকা ছিল টিউলিপের আদি জন্মভূমি। পরবর্তীতে মধ্য এশিয়ার গাছ-পালাহীন পরিত্যক্ত বিস্তীর্ণ প্রান্তরে এর আগমন ঘটে। প্রথমদিকে এটি আগাছা হিসেবেই বিবেচিত হতো। সময়ের সঙ্গে বেনামী ফুলটি পরিকল্পিত চাষাবাদের আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদিত হয়ে ‘টিউলিপ’ নাম পায়।

ষষ্ঠদশ শতাব্দীর আগে টিউলিপের কোনো পরিচিতিই ছিল না। ধারণা করা হয়, ১৫৫৪ সালে তুরস্ক থেকে টিউলিপ ফুলের বীজ বা মূল সর্বপ্রথম ইউরোপে প্রবেশ করে। সপ্তদশ শতাব্দীতে ‘টিউলিপ মূল’-এর প্রতি নেদারল্যান্ডবাসীর আকাশচুম্বী আকর্ষণ দেখা যায়। ইতিহাসে যা ‘টিউলিপ মেনিয়া’ বা ‘টিউলিপ উম্মাদনা’ নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন- শজনে ফুলের উপকারিতা জানলে অবাক হবেন
তখন থেকে শুরু করে আজও টিউলিপ চাষের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে নেদারল্যান্ড বিশ্বে খ্যাতির শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। দেশটি বার্ষিক তিন বিলিয়নেরও অধিক টিউলিপ কন্দ উৎপাদন করে ও এটি তাদের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসরূপে বিবেচিত। টিউলিপকে ঘিরে সেখানে শিল্প গড়ে উঠেছে এবং টিউলিপ উৎসব পালন করা হয়।

পারস্যে লাল টিউলিপকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে চিত্রিত করা হয়। লাল টিউলিপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কালো অংশের মাধ্যমে প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয় ভেঙ্গে খানখান এবং কয়লার ন্যায় পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হতো। আর হলুদ টিউলিপ বিনিময় করাকে আশাহীন ও সম্পূর্ণভাবে নিরাশাগ্রস্ত বোঝানো হতো।
বাংলাদেশেও বিগত কয়েক বছর ধরে টিউলিপ চাষের চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০২০ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রথমবারের মতো টিউলিপ ফোটে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের হার ক্রমশ বাড়ছে।
এনএম

