বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

চা বাংলায় যেভাবে এলো

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২২, ০৩:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

চা বাংলায় যেভাবে এলো

সুমন চ্যাটার্জীর গাওয়া ‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই’ গানে গলা মেলাননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। প্রিয় মানুষটিকে চায়ের কাপে চাওয়ার গভীরতা আর কেউ না বুঝলেও বাঙালিরা ঠিকই বোঝেন। ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চায়ে চুমুক না দিলে যেন দিনেরই শুরু হয় না। বিকেলের আড্ডায় চা থাকা চাই ই চাই। কেউ কেউ তো বলেই ফেলেন, চা ছাড়া আমার চলেই না! 

এই পানীয়টি কিন্তু বাঙালির আবিষ্কার নয়। আমাদের উপমহাদেশে চা এসেছিল ব্রিটিশদের হাত ধরে। তাই বলে ভাববেন না এই পানীয়টি তাদের আবিষ্কার করা। চায়ের ইতিহাস জানতে হলে চলে যেতে হবে আরও পাঁচ হাজার বছর পেছনে। 


বিজ্ঞাপন


teaসময় তখন খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩৭ সাল। চীনের সম্রাট ছিলেন শেন নাং। সম্রাটদের ভেতরে মাঝেমধ্যেই নানা খামখেয়ালি কাজ করে। শেনও তার ব্যতিক্রম নন। হঠাৎ করেই বেশ স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে উঠলেন। সবাইকে আদেশ দিলেন গরম পানি পান করার। নিজেও ফুটানো পানি পান করতে শুরু করলেন। 

একদিন সম্রাট তার বাগানে বসে গরম পানি পান করছিলেন। হঠাৎ বাতাসে কিছু ক্যামেলিয়া সিনেনসিসের পাতা এসে পড়ল সম্রাটের পানির পাত্রে। সেগুলো তুলে ফেলার আগেই পানির রঙ বদলে যেতে শুরু করল। অবাক হলেন তিনি। 

teaসেই রঙিন পানিই পান করলেন সম্রাট। পুরোটা দিন বেশ চনমনে ছিলেন। পরদিন আবার সেই পাতা মিশিয়ে গরম পানি পান করলেন। এভাবেই শুরু। নিজের অজান্তেই চা আবিষ্কার করে ফেলেন চীনের সম্রাট শেন নাং। 

প্রথমদিকে চা কিন্তু কেবল পানীয় নয়, বরং ঔষধি পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হত। হাঁপানির মতো নানা অসুখ থেকে দূরে থাকতে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এভাবেই চা পান করা শুরু করেন চীনা মানুষেরা। দেশটির সিচুয়ান প্রদেশেই লিকার ঘন করে তৈরি করতে শেখে মানুষ। ১৬১০ সালে পর্তুগিজদের হাত ধরে চা চলে আসে ইউরোপে। একটা সময় চায়ের ব্যবহার বেড়ে গেলে চীনারা বাণিজ্যিকভাবেই চা উৎপাদন করা শুরু করে। ১৭০০ সালে চা চলে আসে ব্রিটেনে।


বিজ্ঞাপন


teaচায়ের প্রেমে পড়ে যায় ব্রিটিশরা। এমনকি একটা সময় চীনের কাছে স্বর্ণের বদলে চা কিনতে শুরু করে তারা। ফলে বড়রকম বাণিজ্যিক ক্ষতিতে পড়ে তারা। সমস্যা সমাধানে ব্রিটিশ শাসকরা ভারতীয় উপমহাদেশে আফিম উৎপাদন শুরু করে। পরবর্তী সময়ে আফিমের বদলে চীন থেকে চা কিনতে শুরু করে তারা।

একসময় ব্রিটিশরাই ভারতেই চা নিয়ে আসে। প্রথমে বিনা মূল্যেই চা পান করতে দেওয়া হতো এখানে। তবে একটা সময় এটি মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে ব্রিটিশ শাসকেরা সাধারণ জনগণকে টাকার বিনিময়ে চা পান করতে বাধ্য করে।

tea১৮১৮ সালে ভারতবর্ষে প্রথম চা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটির নাম ‘অসম চা কোম্পানি’। ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশরা খোদ সিলেটেই চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর থেকে এখানেই চলে চায়ের উৎপাদন। ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালণীছড়ায় শুরু হয় চায়ের আনুষ্ঠানিক ও বাণিজ্যিক উৎপাদন। সেই থেকে শুরু।

প্রিয় পানীয়টি ইতিহাস তো জানলেন। এবার চলুন চা সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। 

teaএক পাউন্ড চা তৈরিতে কতটুকু চা পাতার প্রয়োজন হয় জানেন? প্রায় ২০০০ চা পাতার কুড়ি লাগে। বিশ্বে প্রায় ৩ হাজার ভিন্ন জাতের চা পাওয়া যায়। 

ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি, ওলং টি- সবগুলোই উৎপন্ন হয় একই গাছ থেকে যার বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেসিস। প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে এসব চায়ের স্বাদ, গন্ধ আর আকারে ভিন্নতা আসে।

teaব্রিটেনে একজন মানুষ প্রতি বছর কত কাপ চা পান করেন জানেন? আনুমানিক ১ হাজার কাপ। বিশ্বজুড়ে সারা বছর চা পান হয় ৩.৬ বিলিয়ন কাপ।

বিশ্বের সবচেয়ে দামি টি ব্যাগটির কাগজ তৈরি হয়েছে হীরা দিয়ে। ইংল্যান্ডের বুডলস জুয়েলারি তৈরি করেছিল এটি। এক নিলামে ৭ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয় টি ব্যাগটি।

বর্তমানে বিশ্বের মোট ৫২টি দেশে চা উৎপন্ন হয়। সবচেয়ে পুরোনো চা গাছটি রয়েছে চীনে। তার বয়স ৩,২০০ বছর।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর