শাড়ি। দুই অক্ষরের শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি নারীর অসংখ্য আবেগ। এটি এমন একটি পোশাক যা সহজেই আপন করে নেয় কিশোরী থেকে শুরু করে প্রৌঢ়া। শাড়ি ভালোবাসেন না এমন নারী কমই আছেন। ১২ হাত দৈর্ঘ্যের বিশেষ এই পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে নারীরা হয়ে ওঠেন লাস্যময়ী, কখনো মায়াবী আবার কখনো মমতাময়ী।
শাড়ির রকমফেরের শেষ নেই। সুতি, সিল্ক, মসলিন, তসর, ধুপিয়ান, মটকা। নামেরও আছে বাহার। সুতি শাড়ি থেকে শুরু করে বেনারসি, কাতান, বালুচরি, শিফন, জর্জেট, জামদানি, মনিপুরি ইত্যাদি। রকম বা ধরন যাই হোক, আলমারিতে নিজের একটা শাড়ি থাকা চাই ই চাই।
বিজ্ঞাপন

নারীদের শাড়ি পরার শুরুটা হয় মা কিংবা দাদী-নানীর শাড়ি পরে। আনাড়িভাবে পরা শাড়িতেই কিশোরী নিজেকে নারী রূপে দেখতে চায়। প্রেমিক বা স্বামীর কাছ থেকে প্রথম উপহার পাওয়া শাড়িটিও নারীদের কাছে বিশেষ হয়ে থাকে চিরকাল। টাকা জমিয়ে পছন্দের শাড়ি কেনার গল্পও জমা আছে অনেকের থলিতে।
নারীরা কেন শাড়ি ভালোবাসেন? শাড়িকে ঘিরে তাদের আবেগই বা কী? উত্তর জানতে বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন পেশায় যুক্ত নারীদের কাছে পৌঁছায় ঢাকা মেইল। শাড়ি নিয়ে মনের আগল খোলেন তারা-
বিজ্ঞাপন

পেশায় শিক্ষক আরেফা রিয়া। তার মতে শাড়ি পরলে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী বেশি মনে হয়। তিনি বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে রোজ শাড়ি পরা সম্ভব হয় না। তবু সুযোগ মিললে শাড়ি পরি। মন ভালো হয়ে যায় শাড়ি পরলে। কালো রঙা শাড়ি আমার সবচে প্রিয়’।

প্রচ্ছদশিল্পী ফারিহা তাবাসসুম শাড়ি পরতে ভীষণ ভালোবাসেন। তিনি বলেন, ‘শাড়িতে আমি পরিপূর্ণ ও আত্মবিশ্বাসী । শাড়িতে অমলিন।'

শাড়ির সঙ্গে প্রেমের অন্যরকম সংযোগ খুঁজে পান লিংক থ্রি টেকনোলজিস লিমিটেডের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক ফাইরুজ সুলতানা। এই নারী বলেন, ‘শাড়ি মানেই বাঙালি নারীর আবেগ ভালোবাসা, দুঃখ-সুখের স্মৃতিমাখা একটি পোশাক। শাড়িতে নারীকে লাগে অপরূপা, শাড়ি আসলে প্রেমের ডাকনাম’।

রামু ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের সহকারী শিক্ষক স্বাতী কাজের সূত্রে প্রায়ই শাড়ি পরেন। এই পোশাকটিতে আনন্দ খুঁজে পান তিনি। স্বাতী বলেন, ‘আমার কাছে শাড়ি মানে একটা মায়া, ভালোবাসা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে মনে করা৷ আমি অন্য কোনো পোশাকে এতটা আরাম পাইনা যতটা শাড়িতে পাই। শাড়ির প্রতিটি সুতা, প্রতিটি কাজ, প্রতিটি নকশা যেন এক একটি গল্প। একেক শাড়ির একেক গল্প আছে সেগুলো জানতে আমার ভালো লাগে। যেকোনো উৎসব অনুষ্ঠানে প্রথম ও প্রধান পছন্দ শাড়ি। শাড়িকে মার্জিত আভিজাত্যপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় আয়োজন মনে হয় আমার কাছে।'

গৃহিণী শায়লা জামান একজন শাড়িপ্রেমী। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় শাড়িতে নারীর স্নিগ্ধ যে সৌন্দর্য সেটা ফুটে উঠে। শাড়ি আসলে নারীর সৌন্দর্যের কবিতা। শাড়ি শুধু আমার পোশাক নয়, শাড়ি আমার আত্মবিশ্বাস।‘

ডিবিএল গ্রুপের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছে বিভা হক। শাড়িতে নিজেকে রাণি রূপে আবিষ্কার করেন তিনি। বিভা বলেন, ‘শাড়ি এক টুকরো কাপড় যা আমাকে নিজেকে ভালোবাসতে শেখায়। আয়নায় নিজেকে রাণি মনে হয়। সেসঙ্গে চিরচেনা আমি কে নতুন আত্মবিশ্বাসী আমি হিসেবে খুঁজে পাই শাড়ি পরলে।'

নানারকম কেক তৈরি করেন খাইরুননাহার মুক্তা। কেক যেমন সাজান নানা রঙের পেস্ট্রিতে তেমনি নিজেকে সাজান নানা রঙের শাড়িতে। মুক্তা বলেন, ‘শাড়ি কোন পোশাক না,মেয়েদের কাছে শাড়ি একটা আবেগের নাম। অকারণেও বাসায় শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াতে কেমন শান্তি লাগে। শাড়ি পরলে একটা সাধারণ দিনও অসাধারণ সুন্দর হয়ে যায়। শাড়ি, চুড়ি আর ছোট্ট একটা টিপে সাদামাটা মেয়েটাও অপ্সরা হয়ে ওঠে।'

চিকিৎসা পেশায় জড়িত সামছুত্তাব্রীজ বর্ণা। এই নারী বলেন, ‘আমার সবচেয়ে পছন্দের পোশাক শাড়ি। কেন যে এত ভালোবাসি পরতে তার আসলে নির্দিষ্ট তেমন কোনো কারণ নেই। শাড়ি গায়ে জড়ালে কেমন যেন গায়ে মমতার স্পর্শ টের পাই। মনে হয় যেন শাড়ির মতো যত্নে আমাকে কেউ রাখে না।’

শাড়িকে হতাশা দূর করার ওষুধ মনে হয় গৃহিণী হালিমা নদীর। তার মতে, ‘শাড়ী একটা রহস্যময় পোশাক। আমার নিজের মনে হয় শাড়ি হচ্ছে এন্ট্রিডিপ্রেশন পিল। শাড়ী পরে একটু গাঢ় করে কাজল দিলেই মনে হয় দুনিয়ার সব দুঃখ উড়ে গেছে, আঁচল উড়িয়ে সাদা পায়রার মতো আমিও উড়ে বেড়াই।’

লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার অপর্ণা সূত্রধর সুযোগ পেলেই শাড়ি পরেন। এই নারী বলেন, ‘আমি শাড়ি ভালোবাসি। কারণ একমাত্র শাড়িই পারে আমার নারীত্বের সৌন্দর্যকে সর্বোচ্চভাবে ফুটিয়ে তুলতে। তাই শাড়ি পরার ন্যূনতম কোনো সুযোগ পেলেই আর মিস করি না।'

খুলনার কেডিএ স্কুল এন্ড কলেজ প্রভাষক নাজিয়া ইসলামের মতে, ‘শাড়িতে একজন নারীকে যতটা সুন্দর লাগে,আমার কাছে মনে হয় তা অন্য কোনো পোশাকে লাগে না। শাড়ি পরলে আমার মন ভালো হয়ে যায় তাই আমি সময় আর সুযোগ পেলেই শাড়ি পরি এবং শাড়ি পরতে ভীষণ ভালোবাসি।’
এনএম

