‘সেই হারানো চড়ুইয়ের ডাক/ বলে যে গেছে সে চলে যাক/ নিজেকে ভালোবাসো তুমি এবার’—সোমলতার মায়াবী কণ্ঠে ‘মাছ মিষ্টি অ্যান্ড মোর’ সিনেমার এই গান হয়তো শুনেছেন আপনি। না শুনলেও সমস্যা নেই। জলের গান ব্যান্ডের ‘এমন যদি হতো’ গানটি কি শুনেছেন? যেখানে দুটো লাইন আছে- ‘হঠাৎ ফিরে দেখি/ নিজের মুখোমুখি/ শূন্য ভীষণ শূন্য মনে হয়’।
দুটো গানের কথায় একটি সাধারণ মিল রয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই নিজেকে ভালোবাসার ব্যাপারটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শত ব্যস্ততার ভিড়ে কখনো কি নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন? শেষ কবে নিজেকে ভালোবাসে নিজের যত্ন নিয়েছেন মনে পড়ছে? শখের খাবার কিংবা পোশাকটা শেষ কবে কেনা হয়েছে?
বিজ্ঞাপন

বাস্তবতার যাঁতাকলে পিষে আমরা কেবল অন্যকে নিয়ে ভেবে যাই। প্রিয়জন, পরিবার, কর্মক্ষেত্রের ঊর্ধ্বতনদের কী করে খুশি রাখতে হবে তার পেছনে ছুটে বেড়াই। এত কিছুর ভিড়ে ভুলে যাই নিজের কথা। এরপর একসময় যখন অবসর মেলে তখন নিজের মুখোমুখি হয়ে দেখি নিজের সত্ত্বার মতো আপনজন এই পৃথিবীতে কমই আছে।
আরও পড়ুন- নিজেকে ভালো রাখতে হলে ভালোবাসতে হবে
আজকাল মানুষ নিজের প্রাধান্য দিতে ভুলে যাচ্ছেন। সমাজ, পরিবার, সংসারের দায়দায়িত্ব, কাজের চাপের ভিড়ে ভুলতে বসেছেন নিজের কথা। তবে সুন্দর জীবনযাপনের জন্য অন্যকের ভালোবাসার আগে নিজেকে ভালোবাসা জরুরি। ইংরেজিতে যাকে ‘সেলফ লাভ’ বলে আরকি।
বিজ্ঞাপন

সেলফ লাভ জরুরি কেন?
‘সেলফ লাভ’ বলতে কেবল নিজেকে ভালোবাসা বোঝায় না। আত্মপ্রেমের পাশাপাশি আত্মসচেতন বোধ তৈরি করার মন্ত্রের নামই সেলফ লাভ। নিজের মন বোঝা, মনের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া, নিজের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়াই সেলফ লাভ।
আরও পড়ুন- পুরনো প্রেমের স্মৃতি ভুলবেন কী করে?
নিজেকে ভালোবাসলে সবার আগে যে বিষয়টি অর্জন করবেন তা হলো আত্মবিশ্বাস। আর আত্মবিশ্বাস যখন জোরালো হবে তখন জীবনের যেকোনো বড় চ্যালেঞ্জ তুড়ি মেরে মোকাবিলা করার শক্তি পাবেন আপনি। নিজের ভালো-মন্দ সব দিক গ্রহণ করতে পারবেন সহজে।

করোনা পরবর্তী সময়ে বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে জোর দিচ্ছেন। আর এই স্বাস্থ্যকর জীবনেরই একটি অংশ সেলফ লাভ বা নিজেকে ভালোবাসা। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তা বাহ্যিক সৌন্দর্যেও ফুটে উঠবে। শারীরিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে এতে।
আরও পড়ুন- আপনি কি সুখী? মিলিয়ে নিন লক্ষণে
নিজেকে ভালোবাসার উপায় কী?
ভাবছেন হয়তো, নিজেকে ভালোবাসবেন কীভাবে? জীবনে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই কাজটি করতে পারবেন আপনি। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই-

না বলতে শিখুন
নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছাগুলো বুঝতে শিখুন। প্রয়োজনে তা ব্যক্ত করুন। মনে মনে কষ্ট পেয়ে মুখে কোনো বিষয়কে মেনে নেওয়ার স্বভাব থেকে বেরিয়ে আসুন। যে কাজে আনন্দ পান, তা করুন। যা করতে ভালো লাগে না, তাতে ‘না’ বলতে শিখুন।
আরও পড়ুন- জীবনে সুখী হওয়ার গোপন ৫ রহস্য
নিজেকে আবিষ্কার করুন
আপনি হয়ত কারো সন্তান, কারো সঙ্গী, কারো অভিভাবক, কারো ভাইবোন, কারো বন্ধু, কারো আত্মীয় আবার কারো সহকর্মী। এসব চরিত্রের বাইরেরও একটি চরিত্র আছে। আর সেটি আপনি নিজে। সব দায়িত্বকে মাঝেমধ্যে একপাশে রেখে নিজেকে আবিষ্কার করুন। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুন কিছুটা সময়।

‘মি টাইম’ কাটান
নিজেকে ভালোবাসতে হলে নিজের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটানো উচিত। একান্ত নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন। এটি আপনার মি টাইম (Me Time)। এই সময়ে আপনি কী করবেন, কীভাবে কাটাবেন তা একান্তই আপনার বিষয়। মন চাইলে শপিং করতে পারেন, ঘুরতে পারেন কিংবা রেস্টুরেন্টে গিয়ে পছন্দের খাবার খেতে পারেন। চাইলে বই পড়ে, আঁকাআঁকি করে, গান শুনে, নেচেও মি টাইম কাটানো যায়। মোদ্দা কথা, আপনার প্রিয় কাজগুলো করার সময় এটি।
আরও পড়ুন- আনন্দে বাঁচার সহজ উপায়
অন্যের ভাবনা নিয়ে ভাবা বন্ধ করুন
একটি কথা প্রচলিত রয়েছে- ‘অন্যরা আপনাকে নিয়ে কী ভাবলো তা যদি আপনি ভাবেন, তাহলে অন্যরা কী ভাববে?’ ব্যঙ্গাত্মক এই কথাটি কিন্তু খুব একটা ভুল নয়। মানুষ আপনার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করতেই পারে। তাতে অত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। নিজের কাছে সৎ ও স্বচ্ছ থাকাটাই আসল। আপনি ভালো করেই জানেন আপনি কী এবং কী করছেন। তাই অন্যরা কী ভাববে তা ভেবে নিজের জীবন চালাবেন না।

আফসোস করা ছাড়ুন
মানুষ মাত্রই ভুল। প্রতিটি মানুষই জীবনে ভুল করে। কিন্তু সেসব ভুল মনে গেঁথে পড়ে থাকলে চলবে না। এতে জীবন থমকে যায়। সামনে আগানো কঠিন হয়ে পড়ে। তার চেয়ে বরং রিগ্রেট বা আফসোস করা ছাড়ুন। ভুলগুলো সহজে মেনে নিন। সবকিছুতেই পারফেক্ট হতে হবে এমন কথা নেই। আপনি আপনার মতো চেষ্টা করুন। ফলাফল যা হোক তা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলুন।
অন্যকে ভালোবাসা উচিত। তবে ভালোবাসার মানুষের তালিকায় সবার আগে রাখুন নিজের নাম। জীবন হবে সুন্দর।
এনএম

