দেহের বাড়তি ওজন অসংখ্য রোগের কারণ। কারণ মেদ ঝরানোর মিশনে থাকেন বেশিরভাগ মানুষ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ওজন কমতে শুরু করে। কিন্তু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। শত চেষ্টা করেও ওজনের পরিমাণ কমানো সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, ভাজাভুজি কিংবা পোলাও-বিরিয়ানির মতো খাবারের লোভও কেউ কেউ কোনোভাবেই ছাড়তে পারে না। কিন্তু কেন এমন হয়?
এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন এমন অবস্থার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে কয়েকটি জিন। চেষ্টা করেও ওজন কমাতে না পারা, ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়ার অদম্য ইচ্ছা এসবের জন্য জিনকে দায়ী করছেন ইটিএইচ জুরিখ ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞাপন
‘দ্য নেচার’ বিজ্ঞানপত্রিকায় এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক লরা হিন্টে জানিয়েছেন, শরীরের নানা কোষের মধ্যে ফ্যাট কোষের ‘স্মৃতিশক্তি’ খুব প্রখর। সেটি কেমন? লরা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, এই কোষগুলোকে পরিচালনা করে যেসব জিন, তারাই আসল কলকাঠি নাড়ে।
কোন জিনিসটি আপনি খেতে বেশি ভালবাসেন এবং বার বার খেতে চান, সেটি খাওয়ার জন্যই আপনাকে বাধ্য করবে এই জিন। চাইলেও সেই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এমসি৪আর, লেপটিন, বিএসএন, এনটিআরকে২ নামক কয়েকটি জিন স্থূলত্বের জন্য দায়ী। এই জিনগুলোর কোনো একটি শরীরে থাকলেই স্থূলত্বের শিকার হতে হবে।
কয়েকটি ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এই দাবি করেছেন। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এসব জিন রয়েছে এমন কয়েকটি ইঁদুরকে আলাদা করে পরীক্ষা করা হয়। দেখা গেছে, বাকিদের তুলনায় ওই ইঁদুরগুলোই বেশি চিনি জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করছে। শুধু তাই নয়, বার বার খেতে চাইছে।
কয়েক মাস আগে ‘নেচার জেনেটিক্স’-এ একটি গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির এপিডেমিয়োলজি বিভাগের গবেষকেরা দাবি করেছিলেন, বিএসএন জিনটি যাদের শরীরে রয়েছে, তাদের স্থূলত্বের হার অনেক বেশি। এসব মানুষ খুব তাড়াতাড়ি ফ্যাটি লিভার ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত হন।
প্রায় ৫০ হাজার জনের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এবং তাদের ‘বডি মাস ইনডেক্স’ দেখে এমন দাবিই করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছিল, ব্রিটেনে প্রায় ১০ হাজার মানুষের শরীরে ওই জিনটি রয়েছে এবং তারা সকলেই স্থূলত্ব ও ডায়াবেটিসের শিকার।
স্থূলত্বের সঙ্গে জিনের সম্পর্ক নিয়ে বর্তমানে অনেক দেশেই গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে গবেষণা আরও এগোলে বোঝা যাবে, কীভাবে স্থূলত্ব ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত অসুখবিসুখগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে জিন। তার থেকে পরিত্রাণের উপায়ও বের করা সহজ হবে।