দুঃখ কে না পায়, কষ্ট কাকে না ছোঁয়? কেউ কষ্ট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কেউবা পারে না। তবে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন যারা ছোটোখাটো দুঃখ-কষ্টও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ঠুনকো বিষয়ে তারা কেঁদে বুক ভাসান।
দুঃখ পেলে কাঁদা স্বাভাবিক। তবে অনিয়ন্ত্রিত কান্না বিরক্তিকর, অস্বস্তিকর, বিব্রতকর ও ক্লান্তিকর হতে পারে। এজন্য এমন মানুষরা কান্না চেপে রাখার উপায় খুঁজে বেড়ান। কান্নার কারণ কী তা বুঝতে পারা এবং সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা বেশ স্বস্তির ব্যাপার। কেননা অনেকসময় ব্যক্তি না চাইতেও কেঁদে ফেলেন। কিংবা এমন বিষয়ে কান্না করে ফেলেন যা কান্না করার মতো কোনো বিষয় নয়। এই বিষয়টি ঐ ব্যক্তিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়।
বিজ্ঞাপন

কান্নার কিছু কারণ
পরাজিত হওয়া
ভয় পাওয়া
খারাপ খবর প্রাপ্তি
অতীতের প্রিয়জনকে মনে পড়া
আরও পড়ুন- রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
সহমর্মিতা (অন্য কারোর দুঃখ, কষ্ট দেখে)
দুঃখজনক পুরনো স্মৃতি
রাগ
সম্পর্কে ভাঙ্গন
সুখ প্রাপ্তি

কান্না নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
পরিস্থিতি থেকে দূরে সরে যান
রাগ, ঝগড়া, খারাপ কিছু দেখা এমন কোনো বিষয়ে কান্না পেলে পরিস্থিতি থেকে দূরে সরে যান। কিংবা এমন কোনো কাজ করুন যা আপনার ভালো লাগে। কারো কথায় কষ্ট পেয়ে কিংবা কারো উপর রাগ করে কান্না পেলে তার সামনে থেকে কিছুক্ষণের জন্য সরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলুন
অনেকসময় ব্যক্তি নিজের সমস্যা কারোর সঙ্গে শেয়ার করতে চান না। ফলে একা একা বিভিন্ন চিন্তা করে সমস্যাকে আরও গভীর মনে হয় আর কান্না পায়। তাই চেষ্টা করুন এমন পরিস্থিতিতে প্রিয়জনের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে। তারা আপনাকে সাহস ও ভরসা দেবে। যা কান্না দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

শ্বাস-প্রশ্বাসে মন দিন
যেখানেই থাকুন না কেন, যদি মনে হয় খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু কাঁদতে পারছেন না তখনই বড় বড় নিঃশ্বাস নিন এবং তা ধীরে ধীরে ছাড়ুন। নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন আর মুখ দিয়ে ছাড়ুন। বেশ কয়েকবার এমনটা করতে থাকুন। শরীরে অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ হলে খুব সহজেই কান্নার আবেগ চলে যাবে। মনও অন্যদিকে ঘুরে যাবে।
ফোকাস অ্যান্ড রিলাক্স
বিব্রতকর কান্না এড়াতে নিচে মাটির দিকে বা কোনো বস্তুর দিকে ফোকাস করে তাকিয়ে থাকুন। নিজের মনকে শান্ত করুন আর মনকে বোঝান যে আপনি কোনোভাবেই কান্না করবেন না। রিলাক্স মোডে চলে যান। মুখের এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করুন এবং মুখের মাংশপেশী শিথিল করার চেষ্টা করুন।

বেশি করে পানি পান
এক্ষুনি কেঁদে ফেলবেন মনে হলে একসঙ্গে অনেকটা পানি পান করুন। পানি আপনার স্নায়ুকে শিথিল করতে সাহায্য করবে। ফলে কান্নার আশঙ্কা দূর হবে।
নিজের সঙ্গে কথা বলুন
কান্না পেলেই ওয়াশরুম-এ চলে যান। কিংবা এমন কোথাও যান যেখানে আয়না রয়েছে। এবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলুন। নিজেকে বোঝান যে এই পরিস্থিতিতে আপনার সামলে ওঠা দরকার। দেখবেন ধীরে ধীরে কান্না নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

১ থেকে ১০০ গোণা
কান্না নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না এমন পরিস্থিতি হলে মনে মনে প্রথমে ১ থেকে ১০০ গুনুন। এরপর আবার উল্টো দিক থেকে অর্থাৎ ১০০ থেকে ১ গুনুন। গোনার সময় নাক দিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস গ্রহণ করুন এবং আস্তে আস্তে ছাড়ুন। এতে মনোযোগ কান্নার দিক থেকে গণনার দিকে চলে যাবে। চাইলে ১ থেকে ১০ ও গুণতে পারেন।
চোখের ব্যায়াম
প্রথমে চোখের মনি ডান থেকে বাম দিকে ঘোরান। আবার বাম থেকে ডান দিকে ঘোরান। এভাবে কয়েকবার করলে চোখ থেকে পানি সরে যায় আর কান্না আটকানো সম্ভব হয়। কাজটি অবশ্যই এমনভাবে করবেন যেন কেউ না দেখে। ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলেও কান্না আটকানো সম্ভব।

পুনরাবৃত্তিমূলক চিন্তা
কান্না পেলে পছন্দের কোনো গান বা কবিতা স্মরণ করুন। যেগুলো আপনাকে আনন্দ আর শান্তি দেয়। এগুলো বার বার মনে মনে পড়ুন বা গাইতে থাকুন।
অন্য চিন্তা করুন
কোনো পরিস্থিতির চাপে পড়ে যদি কান্না পায় তাহলে সেই প্রসঙ্গে চিন্তা-ভাবনা করা একদমই বন্ধ করে দিন। তারচেয়ে বরং অন্য কিছু ভাবুন। কোনো সুখস্মৃতি বা মন ভালো করার কথা ভাবতে পারেন। কান্নার কারণটি ভুলে গেলেই আর কান্না পাবে না।

যদি কেঁদেই ফেলেন
কান্না নিয়ন্ত্রণের সব চেষ্টা করেও যদি ব্যর্থ হন, রাগ বা অভিমানে যদি কেঁদেই ফেলেন তাহলে নিজেকে খারাপ ভাবার কিছু নেই। বরং কান্না স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি মানসিক চাপ অনেকখানি কমিয়ে দেয়। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩০টি দেশের মানুষের মতে, কান্নার পর তাদের ভালো লাগে। ক্লিনিক্যাল প্রাকটিস করেন এমন চিকিৎসকরা তাদের ৭০ শতাংশ রোগীকে কাঁদতে উৎসাহ দেন।
কান্না একটি বহির্জাত প্রক্রিয়া। কাঁদলে শরীর থেকে এমন একটি রাসায়নিক বের হয় যা স্ট্রেস হলে তৈরি হয়। কান্না শ্বাসক্রিয়া ধীর করে দেহ শিথিল করে। আর শিথিল হলে শরীরে ভালোলাগার অনুভূতি জন্মানোর হরমোন এন্ডরফিন উৎপন্ন হয়। সব মিলিয়ে বলা যায়, দেহে উৎপন্ন স্ট্রেস বা চাপের বিরুদ্ধে কান্না জাদুকরি প্রভাব ফেলে।
তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, মেডিকেল নিউজ টুডে ইত্যাদি
এনএম

