অনেকেই মনে করেন কোল্ড ড্রিংকস বা কোমল পানীয় পানে খাবার হজম হয়। আর তাইতো ঈদ-উৎসবে ভূড়িভোজের পর কোমল পানীয়ের বোতলে চুমুক দেন। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ভাব করেন সব হজম হয়েছে! আসলে কিন্তু তা নয়। পেটপুরে খাওয়ার পর কোমল পানীয় পান করলে সাময়িক স্বস্তি মেলে। কিন্তু খাবার হজম তো দূরে থাক আরও পেট ভরা ভরা লাগে।
পুষ্টিবিজ্ঞানীর বলছেন, অতিভোজের পর কোমল পানীয় পান স্বাস্থ্যের জন্য শুধু ক্ষতিকর নয়, বরং মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দেয়।
বিজ্ঞাপন
কোমলপানীয়র ইতিহাস অর্ধশতকালের। পানি, চিনি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, লেবুর জুস দিয়ে প্রথম তৈরি করা হয় এনার্জি ড্রিংকস। কালের বিবর্তনে এতে এসেছে উপাদানগত পরিবর্তন। যোগ হয়েছে ক্যাফেইন, কখনো বা ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল, অপিয়েট। ক্যাফেইন যোগ করার কারণ হলো, এটি মস্তিষ্ক উত্তেজিত করে। ফলে নিজের মধ্যে ভালো লাগা শুরু হয়।
কোমল পানীয় উৎপাদনকারীরা দাবি করেন, খাবার হজম করতে কোমলপানীয় সহায়তা করে। এই পানি দ্রবীভূত কার্বন ডাইঅক্সাইড খাবার হজম করিয়ে দেয়।
কার্বন ডাইঅক্সাইডকে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে পানির মধ্যে দ্রবীভূত করে এই কোমলপানীয় তৈরি করা হয়। সেই কারণেই এ থেকে বুদবুদ উঠতে থাকে। এই পানি খাবার হজম করতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়।
প্রকৃতি থেকেও কোমলপানীয় পাওয়া যায়। যন্ত্রে তৈরি করা কোমলপানীয় থেকে সেই পানি বেশি ভাল।
বিজ্ঞাপন
অনেক ক্ষেত্রে যন্ত্রে তৈরি কোমলপানীয় চিনি মেশানো হয়। সেই চিনি শরীরের জন্য মোটেই ভাল নয়। প্রাকৃতিক কোমলপানীয় সে দিক থেকে নিরাপদ।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, চিনি নেই এমন কোমলপানীয় ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ এই পানি খেলে খিদে কিছুটা হলেও কমে যায়।
কোমলপানীয় বা ‘কার্বোনেটেড ওয়াটার’ শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। এমনি পানি খেলে যে পরিমাণ ঘাম হয়, কোমলপানীয় তার পরিমাণ অনেকটাই কম।
চিনি মেশানো কোমল পানীয় এড়িয়ে যেতে বলেছেন বিষেজ্ঞরা। তারা বলছেন, চিনি মেশানো কোমলপানীয় লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে।
উল্লেখ্য, কোমল পানীয়তে ফসফরিক এসিড, ক্যাফেইন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কৃত্রিম চিনিসহ নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণ থাকে। খাদ্য হজমে কৃত্রিম পানীয়ের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়, কিন্তু কৃত্রিম পানীয় সাময়িক স্বস্তি দিলেও এটি প্রকৃতপক্ষে পাকস্থলীর ভারসাম্য নষ্ট করে। তাছাড়া এই ধরনের পানীয় শরীরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দেয় যা পরবর্তীতে হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা সৃষ্টি করার পাশাপাশি ক্ষুধামন্দা, অম্লতা বা অ্যাসিডিটি, দাঁতের ক্ষয় বা মেদবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কোমলপানীয় যাতে সহজে জমে যেতে না পারে কিংবা বরফে রূপান্তরিত না হতে পারে সেজন্য কৃত্রিম পানীয়তে ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নি উপাদানটি শরীরে নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে যার অন্যতম হচ্ছে কিডনিতে পাথর হওয়া।
এছাড়া নিয়মিত কোমলপানীয় পান করলে টাইপ-টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। আমেরিকান ডায়েট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা অনুযায়ি, নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব, তবে পুরোপুরি নাকচ করা সম্ভব হয় না।
কোমলপানীয় ‘মেটাবলিক সিন্ড্রোম’ বা বিপাকীয় প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়, যা ক্রমেই ঠেলে দেয় হৃদরোগের দিকে। আছে উচ্চ রক্তপচাপের আশঙ্কাও।
এজেড