বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

আদালতে শাকিবের যত অভিযোগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

আদালতে শাকিবের যত অভিযোগ

বেশ কিছুদিন ধরে চলচ্চিত্র জগতের ভেতরে-বাইরে আলোচনায় চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ। একজন প্রযোজকের আনা এমন অভিযোগ নিয়ে যখন তোলপাড়, তখন তার বিরুদ্ধে প্রথমে থানায় মামলা করতে যান শাকিব খান। কিন্তু গুলশান থানা থেকে তাকে আদালতে মামলার পরামর্শ দেওয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে চিত্রনায়ক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে শাকিব খান মামলা করেন।

চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকির দায়ে করা মামলায় প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তোলেন শাকিব খান। এতে ঘটনার শুরু থেকে ধর্ষণের অভিযোগ আনার পরের ঘটনাও তুলে ধরা হয়।


বিজ্ঞাপন


মামলার অভিযোগে শাকিব খান উল্লেখ করেছেন, ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলা ছায়াছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ এ অভিনয় করতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভারটেক্স মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী মো. জানে আলমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন শাকিব। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ছবির নায়িকা হিসেবে শাকিব খানের বিপরীতে শিবা আলী খানকে মনোনীত করা হয়।

Shakib Khanপরে শুটিং করতে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যান। এরপর জানতে পারেন ছবিতে আগে থেকে মনোনীত নায়িকা শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ এর শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া আসতে পারেননি। তার জায়গায় অ্যানি রেনেসা সাবরিন নামের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এক নারীকে নায়িকা হিসেবে তার সঙ্গে অভিনয় করার জন্য মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ শাকিবকে অনুরোধ করেন। তবে শাকিব তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে প্রস্তাব নাকচ করেন।

পরে আসামি রহমত শাকিবকে ফাঁদে ফেলার জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আসামি বাদীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে বাদীকে রিফ্রেশমেন্টের জন্য একটি নামিদামি ক্লাবে নেওয়ার প্রস্তাব করলে শাকিব রাজি হয়ে একদিন শুটিং শেষে আসামির সঙ্গে ক্লাবে যান। সেই ক্লাবে গিয়ে বাদী অ্যানি রেনেসা সাবরিনসহ আরও দুই/তিন জন অপরিচিত লোকজনকে দেখতে পান। পরে ক্লাবে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পানীয় পান করেন শাকিব খান। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থবোধ করলে হোটেলে ফেরত আসার সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময় আসামি এবং অন্য দুই/তিন জন লোককে খুঁজে না পেয়ে অ্যানি রেনেসা সাবরিন থেকে বিদায় নিয়ে গভীর রাতে হোটেলে ফেরত আসতে গেলে অ্যানি শাকিবকে জানান, আপনি যেহেতু অসুস্থবোধ করছেন তাহলে চলেন আমি আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি। পরে শাকিব অনেকটা নিরুপায় হয়েই ওই ভদ্র মহিলার প্রস্তাবে রাজি হয়ে হোটেল রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথে শাকিব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অজ্ঞান হয়ে যান।

>> আরও পড়ুন: শাকিবকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালেন সেই প্রযোজক


বিজ্ঞাপন


ঘটনার পরদিন সকালে মামলার আসামি রহমত শাকিবকে ফোনে জানান, তুমি রাতে ওই মহিলার সঙ্গে কী করেছ, সবকিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে এক লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা না দাও তাহলে আমি সব ভিডিও ক্লিপ ও অ্যানি রেনেসা সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে তোমার নামে কমপ্লেইন করব এবং তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না।

Courtএরকম বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শনের ফলে একপর্যায়ে শাকিব ভয় পেয়ে যান। বাদী তখন ভাবে, যেহেতু তিনি অজ্ঞান ছিলেন সেহেতু তারা তার সঙ্গে এমন কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাদী ভয়ে তখন আসামিকে বলেন যে, আমার কাছে তো এত ডলার নেই। আমি তোমাকে এত টাকা দেব কীভাবে? পরে আসামি প্রতি উত্তরে জানায়, তুমি অনেক বড়লোক, তোমার অনেক টাকা আছে, টাকা না থাকলে বাংলাদেশ থেকে টাকা আনাও, যদি আমার দাবি করা ডলার পরিশোধ না করো তাহলে সব ভিডিও ক্লিপ আমি মিডিয়াতে দিয়ে দেব এবং ভিডিও ক্লিপসহ অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের কাছে অভিযোগ করব। তাতে তোমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে হয়ে যাবে। তখন শাকিব ভয়ে এবং তার ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে আসামি রহমত উল্লাহকে তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার প্রদান করেন। এরপর আসামি তাকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখালে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি টাকায় শাকিব তাকে মোট ৪০ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে প্রদান করেন।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামি চাঁদা চাওয়া অব্যাহত রাখলে এবং বাদীর কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় পরবর্তীতে চাঁদা দিতে না পারায় বাদীকে জানানো হয়, তার নামে অস্ট্রেলিয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

>> আরও পড়ুন: ধর্ষণ অভিযোগের মাঝেই সিনেমা মুক্তির খবর শাকিবের

পরে বাদী পুনরায় ২০১৮ সালে ওই ছবির শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া গেলে আনুমানিক ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই অভিযোগের ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ কর্মকর্তা বাদীকে জানান, ‘মিস্টার খান ইট ইজ এ হানি ট্রেপ, সো বি অ্যাওয়ার ইয়োর সেলফ ফ্রম দ্যাম’। শাকিব বুঝতে পারেন আসামি মিথ্যা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাদীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তারপর থেকে বাদী আসামিকে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দিলে আসামি মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বিভিন্ন জায়গায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং তার পরিবারের সদস্যদের কাছে বাদীর নামে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটাতে থাকেন।

সবশেষ ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ আনুমানিক রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ওই ঘটনা মীমাংসার কথা বলে স্প্যারো নামক একটি রেস্টুরেন্টে ওই আসামি বাদীর কাছে ১ লাখ ডলার পুনরায় দাবি করে। আসামি জানায় যে, যদি ১ লাখ ডলার না দিস তাহলে তোর মাথা আর ঘাড়ে থাকবে না। তোর ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেব বলে হুমকি প্রদান করেন। ফলে বাদী এখন একপ্রকার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মামলার উদ্যোগ নেন।

এদিকে, মামলার পর রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে আদালত। সেই সঙ্গে আগামী ২৪ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর