বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

অর্থপাচার ও বিপিসি নিয়ে যা বললেন হাইকোর্ট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

অর্থপাচার ও বিপিসি নিয়ে যা বললেন হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির ৪৭২ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারে ঘটনায় বিপিসির ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) এ বিষয়ে শুনানির সময় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।


বিজ্ঞাপন


এ দিন আদালতে বিপিসির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ আজাদ। শুনানিকালে তারা স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির অনিয়মের বিষয়ে বলেন, এই অনিয়মের পেছনে দায়ী মঈনুদ্দিন আহমেদ ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ। মোহাম্মদ শাহেদ বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। তবে তিনি করোনার মধ্যে মারা গেছেন বলেও আদালতকে জানানো হয়।

>> আরও পড়ুন: বাবুল-ইলিয়াসের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পেছাল

পরে আদালত বিপিসির আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, তখন কি আপনারা (বিপিসি) নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন? জবাবে বিপিসির আইনজীবীরা বলেন, অনিয়মের ঘটনা নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। এ ঘটনায় কমিটিও গঠন করা হয়েছে, মামলা হয়েছে।

পরে আদালত বলেন, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ যিনিই করুক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আগামী ২৯ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন এ নিয়ে পরবর্তী আদেশ দেবন আদালত।


বিজ্ঞাপন


গত ৪ নভেম্বর জাতীয় একটি দৈনিকে ‘৪৭২.৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বিপিসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। পরে গত ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির ৪৭২ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান হাইকোর্ট। অডিটর জেনারেল ও বিপিসির চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

>> আরও পড়ুন: মিন্নির জামিন আবেদন শুনতে নারাজ হাইকোর্ট

প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির (এসএওসিএল) ২১ অনিয়মের কারণে সরকার ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) ২০১২-১৩ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত এসএওসিএলের নথি পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘বিপিসি ও এশিয়াটিক ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে ৫০-৫০ যৌথ উদ্যোগ এসএওসিএলের। প্রতিষ্ঠানটি ইঞ্জিন তেল, যানবাহনের তেল, ডিজেল, বিটুমিন, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস ও ফার্নেস তেল বিপণন ও বিতরণ ছাড়াও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানে জেট ফুয়েল সরবরাহ করে। এসএওসিএলের নথি পর্যালোচনায় যেসব অসঙ্গতি দেখা গেছে, এগুলোর মধ্যে রয়েছে শীর্ষ কর্মকর্তাদের দ্বারা অর্থ আত্মসাৎ, উচ্চ হার, ওভারটাইম, অনুপস্থিত তহবিল, মামলা-মোকদ্দমা ফি প্রদানে অনিয়ম ও আয়কর অধ্যাদেশ এবং ভ্যাট বিধি লঙ্ঘন।’ 

>> আরও পড়ুন: টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন পিছিয়েছে

প্রতিষ্ঠানটির ৫ পরিচালকের একজন ও এর ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত মঈনুদ্দিন আহমেদের মালিকানাধীন এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির কাছে এসএওসিএলের বিক্রি করা লুব্রিকেটিং তেলের বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে সংস্থাটির ১৯৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এসএসিওএলের নথিগুলোতে দেখা গেছে, এওসিএল চালানের বিপরীতে চেক সরবরাহ করেছিল। তবে, চেকে উল্লেখ করা অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়নি। এছাড়া কোম্পানি আইন অনুযায়ী, অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ।

বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে এওসিএলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিএজি বলছে, ‘এটি গুরুতর অনিয়ম।’

>> আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি নাইমা

২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত কোম্পানির জন্য এসএওসিএলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অগ্রিমের জন্য কোনো ভাউচার বা চালান সরবরাহ না করেই ৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন মঈনুদ্দিন আহমেদ। তিনি ২০১২-১২ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত ২৩ কোটি ১১ লাখ টাকা অগ্রিম হিসেবে তুলে নিয়েছেন। কারণ টাকা তোলার কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। তিনি কখনো এই টাকা ফেরতও দেননি।

সিএজি যখন কোম্পানির কাছ থেকে এই অনিয়মের ব্যাখ্যা চেয়েছিল, তখন তারা বলেছিল যে এটি ছিল লুব-ভিত্তিক তেল, অ্যাডিটিভস ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির জন্য স্থানীয় ব্যয় ছিল। উত্তরটি সন্তোষজনক না হওয়ায় সিএজি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

এ নিয়ে পরবর্তীকালে দুটি ঘটনায় মঈনুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা ছাড়াও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এআইএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর