শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

বিচার বিভাগে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার চেয়ে বিএনপির চিঠি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

বিচার বিভাগে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার চেয়ে বিএনপির চিঠি
প্রতীকী ছবি

বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের জন্য প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রধান বিচারপতির কাছে এই চিঠি দেয়।

চিঠিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন যুক্ত করে তার আলোকে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটি প্রধান বিচারপতির নজরে আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে এতে দাবি করা হয়- রাজনৈতিক মামলার মাধ্যমে বিরোধী মতকে দমন ও ডিজিটাল আইন প্রয়োগ আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করেছে।


বিজ্ঞাপন


চিঠি হস্তান্তরকালে সংগঠনটির সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মাদ আলী ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সংগঠনের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম (বিজেএএফ) বিচার বিভাগের মর্যাদা ও সম্ভ্রমের ওপর আসা ধারাবাহিক অবমাননাকর প্রভাবের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

চিঠিতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দাবি করেন, শুধু আইনজীবীদের সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবেই নয়, বরং নাগরিক হিসেবেও সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে তারা নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন। আমরা সচেতন যে- সংবিধান ও আইন মেনে চলা, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, সরকারি দায়িত্ব পালন করা এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার মূর্ত প্রতীক হিসেবে সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখা। এর নিরাপত্তা রক্ষা করা এবং একে সমর্থন করাও আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। আমরা আরও অবগত যে, প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োজিত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য জনগণের সেবা করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট হওয়া।

>> আরও পড়ুন: অপরাধীকে শাস্তি নয়, সেবা করার নির্দেশনা চেয়ে রিট


বিজ্ঞাপন


চিঠিতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, কেবলমাত্র বিচার বিভাগের কার্য সম্পাদনের পবিত্র দায়িত্ব পালনের কারণেই নয়, বরং এর প্রধান হিসাবে বিচার বিভাগের প্রশাসনিক কার্য সম্পাদনের কঠোর দায়িত্ব পালনের কারণেও আপনি ভালো করেই জানেন যে, বিভিন্ন মামলার দ্বারা এটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। উল্লিখিত পটভূমির পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা কিছু তথ্য, ঘটনার প্রতি আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই-

২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টস্‌ রুল অব ল’ ইনডেস্ক ২০২২’ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ১২৭তম স্থান পেয়েছে। যা অন্য কথায় বলা যেতে পারে যে এটি তালিকার নিচের দিকে অবস্থান করছে। ২০২১ সালের প্রতিবেদনে, ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৪তম স্থানে ছিল।

ইউএসএআইডি চলতি বছরের ১২ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, প্রতিবেদনের শিরোনাম হচ্ছে- ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন ও বিচার খাতের চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন।’ উল্লিখিত প্রতিবেদনে এটি প্রকাশ করা হয়েছে যে- ‘২০০৭ সনে শুরু হওয়া ক্ষমতার সুস্পষ্ট নতুন রূপের অবাস্তব সংস্কার, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য এবং উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগে ক্রমবর্ধমান রাজনীতিকরণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতাকে আরও খর্ব করেছে। এর ফলে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং দক্ষ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না এবং এর প্রতি জনগণের আস্থা কমে গেছে।’

>> আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর সংক্রান্ত প্রতিবেদন তদন্তের নির্দেশ

চিঠিতে জানানো হয়েছে, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন ২০২০ সালের ১৩ জুলাই একটি বিবৃতি দেয়, যেখানে বাংলাদেশে বিচার-বহির্ভূত হত্যা এবং গুম সম্পর্কে বলা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে নির্বিচারে আটকের ঢেউ সঙ্কটকে গভীরতর করে তুলছে’ শীর্ষক ওই বিবৃতিতে বলা হয়- ‘এটা সুপরিচিত যে কঠোর আইনের পদ্ধতিগত অপব্যবহার বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা। বর্তমান সরকার মতামত এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রোধ করার প্রচারণা জোরদার করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সহ বেশ কয়েকটি আইনকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে।’ এছাড়া অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২১ সালের ২৫ জুলাই ‘বাংলাদেশ: অ্যান্ড ক্র্যাকডাউন অন ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন অনলাইন’ শিরোনামে একটি বিবৃতি দেয়, যেখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

সেই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনলাইনে শেয়ার করা একটি মন্তব্যের জন্য ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তল্লাশি চালানো, ডিভাইস এবং তাদের বিষয়বস্তু বাজেয়াপ্ত করার এবং ওয়ারেন্ট ছাড়াই ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেয়। এটি বাংলাদেশ অনুস্বক্ষরকারী ইন্টারন্যাশনাল কভনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) এ বর্ণিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের লঙ্ঘন।’

চিঠিতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আরও বলেন, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সারাদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা নিপীড়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় ৪০ লাখ বিরোধী কর্মীকে প্রায় এক লাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই ধরনের রাজনৈতিক মামলাগুলি ‘রাজনৈতিক নিপীড়নের’ উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজনৈতিক বিরোধীদের নিপীড়ন ও বিচার করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা বিচার ব্যবস্থার এই ধরনের উদ্বেগজনক ব্যবহার, সংবিধানের মৌলিক অধিকারের একটি পরিহাসমূলক লঙ্ঘন এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি, পবিত্রতা ও মর্যাদার ভূলুণ্ঠন।

>> আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে যা বললেন প্রধান বিচারপতি

চিঠিতে বলা হয়, দেশের সচেতন নাগরিকদের সংগঠন হিসাবে বিজেএএফ উপরোক্ত তথ্য, ঘটনা এবং বিবরণ গভীরভাবে উদ্বেগজনক বলে মনে করে এবং একইভাবে বিশ্বাস করে যে এসব তথ্য, ঘটনা এবং বিবরণ আমাদের দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি, মর্যাদা দেশে এবং বিদেশে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করছে। অধিকন্তু, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির এই ধরনের অনুসন্ধানগুলি জনগণের মনে একটি যুক্তিসঙ্গত আশংকা তৈরি করেছে যে, সরকার চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে, যার ফলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে।

এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি দ্বারা প্রকাশিত তথ্যের আলোকে প্রধান বিচারপতির নিকট জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দাবি-

  • বিচারব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের উপলব্ধি, বিশ্বাস এবং আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য এমন পদক্ষেপ যেন গ্রহণ করা হয় যাতে প্রমাণিত হয় যে বিচার বিভাগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত।
  • ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর অধীন মামলাসহ রাজনৈতিক মামলাগুলো এমনভাবে পরিচালনা/ বিচার করা যাতে বিচার বিভাগের ওপর জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা ফিরে আসে।
  • আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো আমলে নিয়ে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি, মর্যাদা এবং সম্ভ্রম পুনরুদ্ধারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এআইএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর