আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আনা আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপি নেতা ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনালের তলবে হাজির হয়ে নিজের মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতির আদেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
যা বলেছেন আদালত
এই বিএনপি নেতার উদ্দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনাদের কথা মানুষ শুনবে, আপনারা মানুষকে দিক নির্দেশনা দেবেন, জুডিশিয়ারিকে গাইড করবেন।’
একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল ভবিষ্যতের জন্য ফজলুর রহমানকে সতর্ক করে দিয়ে আদালত অবমাননা প্রশ্নে জারি করা কারণ দর্শাও নোটিশটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের শুরুতে বিএনপিপন্থি সুপ্রিম কোর্টর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ট্রাইব্যুনালে ফজলুর রহমানের নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন উপস্থাপন করেন।
কাজল বলেন, তিনি (ফজলুর রহমান) সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং মুক্তিযোদ্ধা। ট্রাইব্যুনালকে অবমাননা করার কোনো ইচ্ছা নিয়ে তিনি কথা বলেননি। অসতর্কভাবে যা-ই বলেছেন, তার জন্য তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি ‘জেনুইন রিমোর্স’ প্রকাশ করেছেন। এই আদালতকে অবমাননা করার কোনো উদ্দেশ্য তার ছিল না।
তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি তো উনাকে চিনি, উনি একজন স্বনামধন্য আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ। উনার মতো মানুষ এমন কথা বললে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। ইতোমধ্যে এই বক্তব্য মিডিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। সাধারণ মানুষ বলা এক কথা, আপনারা রয়েছেন শীর্ষে। বিচার বিভাগ নিয়ে, দেশ নিয়ে আপনারা কিছু বললে দেশ চলবে কী করে! আপনাদের কথা মানুষ শুনবে, আপনারা মানুষকে দিক-নির্দেশনা দেবেন, জুডিশিয়ারিকে গাইড করবেন।’
এরপর আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ইশারায় ফজলুর রহমানকে ডায়াসে ডাকেন। তখন তিনি এসে বলেন, ‘আমার বয়স ৭৮ বছর। আমি মিডিয়ায় কোনো কথা বলতে চাই না। উপরে আল্লাহ, নিচে আপনারা- আমার সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।’
তখন ট্রাইব্যুনাল তাকে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের ঘরেও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আছে। আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। আমরা ঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকতে দিয়েছি, তাদের খাবার দিয়েছি। তাদের পথ দেখিয়ে দিয়েছি- কোন দিকে গিয়ে কোন সেতু উড়িয় দিতে হবে, দেখিয়ে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কেউ খারাপ মন্তব্য করবে না।’
এসময় ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে। সেটা ১৯৭৩ সালের আগে কিংবা পরে হতে পারে। এ আইনে শুধু যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে- এমন কথা নেই। দেশে যেকোনো মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য এখানে বিচার করা যাবে।’
ফজলুর রহমানের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, কায়সার কামাল, কামরুল ইসলাম সজলসহ ১৫/২০ জন আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে আদালত অবমানার অভিযোগ নিয়ে শুনানি করেন কৌঁসুলি গাজী এমএইচ তামিম।
গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে ফজলুর রহমানকে অ্যাকাডেমিক সনদ ও বার কাউন্সিলের সনদসহ সশরীরে উপস্থিত হয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে বলেছিল। সেই অনুযায়ী এদিন ফজলুর ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
গত ২৬ নভেম্বর ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর আগে ২৩ নভেম্বর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে গিয়ে শেখ হাসিনার রায় প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেন। যেটির কিছু অংশ আজ ট্রাইব্যুনালে বাজিয়ে শোনানো হয়।
সেখানে ফজলুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি এই কোর্ট মানি না। তখন উপস্থাপক বলেন, তাহলে কি আমরা শুনতে পাইনি? মিডিয়া কি জানতে পারেনি?
তখন ফজলুর রহমান বলেন, ‘সবাই জানে। জানবে না কেন। আমার ইউটিউব শোনেন। আমি এই কোর্ট মানি না। এই কোর্টের বিচার মানি না। ইউটিউবে বলেছি, টকশোতে বলেছি। যদি না বলে থাকি এখন বললে আমার ভুল, আমি মাফ চাইবো। প্রতিদিন বলছি এই বিচার আমি মানি না। এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার হতে পারে না। এই কোর্টের গঠনপ্রক্রিয়া বলে এই কোর্টে বিচার হতে পারে না।
প্রসিকিউশনের সবাই শিবির সমর্থিত বলেও টকশোতে দাবি করেন জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী। ফজলুর রহমানের এই মন্তব্য প্রকাশের পর এ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি নজর এড়ায়নি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেরও।
এএইচ

