রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘ধর্ষণ মামলার নিষ্পত্তিতে তাড়াহুড়া বা বিলম্ব কোনোটাই কাম্য নয়’

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

rape
দেশে পাঁচ লক্ষাধিক ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ চলছে। ছবি: সংগৃহীত

দেশের আদালতগুলোতে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি। অনেক মামলা বছরের পর বছর চললেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। সম্প্রতি মাগুরার আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় অল্প সময়ে ঘোষণা হওয়ায় নতুন করে ধর্ষণ মামলার নিষ্পত্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে আইনাঙ্গনে। কেউ কেউ এই মামলার রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়োর অভিযোগ তুলছেন। আইনবিদরা বলছেন, ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তিতে তাড়াহুড়ো যেমন উচিত না তেমনি অধিক বিলম্বও কাম্য নয়।   

ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি করতে ছয় মাস সময়ের কথা উল্লেখ আছে আইনে। যদিও সেই সময়ে মামলা সাধারণত নিষ্পত্তি হয় না। কারণ, ধর্ষণ মামলায় মিথ্যার শঙ্কা অন্যান্য মামলার তুলনায় বেশি থাকে। অনেক সময় কাউকে ফাঁসানোর জন্য ধর্ষণ মামলা করা হয়। আবার অনেক সময় মামলা প্রমাণ করতে পুলিশ গাফিলতি করে। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার দুর্বলতা, আইন অনুযায়ী ভিকটিম সব আলামত ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে ব্যর্থতাসহ নানা কারণে ধর্ষণের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে সময় লাগে।


বিজ্ঞাপন


তবে এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে যেমন বেশি সময় নেওয়া উচিত না আবার খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করাও ঠিক না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এসএম শাহজাহান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যেকোনো মামলা বেশি তাড়াহুড়া অথবা বেশি দেরি করে নিষ্পত্তি করা বাঞ্ছনীয় না। তাড়াহুড়া করলে মূল জিনিস বাদ পড়ে যেতে পারে। আবার বেশি দেরি করলেও বিষয়বস্তু মিস হয়ে যেতে পারে।’

শিশু আছিয়ার মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই মামলায় আসামিপক্ষে যিনি আইনজীবী আছেন তিনি মামলার মেমোরেন্ডাম দেখবেন। দেখে বুঝতে পারবেন, এ মামলার রায়ে কোনো বিষয় বাদ পড়েছে কি না। বাদ পড়ার কারণে আসামিপক্ষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছে কি না।’

আরও পড়ুন

তিন প্রজন্মকে আর টানতে হবে না দেওয়ানি মামলার ঘানি!

মামলার জট কমাতে সরকারি উদ্যোগে আশার আলো

এই আইনজ্ঞ আরও বলেন, ‘মাগুরার আদালত থেকে যেহেতু এ মামলার প্রয়োজনীয় নথিসমূহ হাইকোর্টে এসেছে, তাই এসব নথি পর্যালোচনা করে মামলার সাক্ষীগুলো দেখে চূড়ান্ত রায় দেবেন। এটি বিচারিক বিষয়। এখনো চূড়ান্ত রায় হয়নি।’

মাত্র ২৩ দিনে এ মামলার বিচার শেষ হয়েছে, এতে করে কোনো পক্ষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেকোনো মামলার বিচার সঠিক সময় নিয়ে নিষ্পত্তি করতে হবে। মামলা নিষ্পত্তিতে যেমন বেশি তাড়াহুড়ো করা ঠিক না, তেমনি মামলা বছরের পর বছর ফেলে রাখাও ঠিক না।’

RR
মাগুরা আদালতে অল্প দিনে সম্পন্ন হয় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচারকাজ। ছবি: সংগৃহীত

দ্রুত নিষ্পত্তিতে মামলার রায়ে কোনো পক্ষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছেন কি না সে বিষয়টি নির্ধারণ করবে উচ্চ আদালত এমন মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘প্রত্যেক মামলার বিচারই সঠিক সময়ে করা উচিত। কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিষ্পত্তি করতে আইনে সময়সীমার কথা বলা আছে। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে কোর্টে সঠিক সময়ে সাক্ষী আসে না। মামলার আলামত নষ্ট হয়ে যায়। আবার আদালতে মামলার চাপও বেশি থাকে। কোনো কোনো সময় পুলিশ রিপোর্ট দিতে দেরি করে। সব মিলিয়ে সঠিক সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা যায় না।’

আরও পড়ুন

আদালতপাড়ায় বকশিশের নামে উৎকোচের রাজত্ব!

মামলা জটে বিপর্যস্ত বিচার বিভাগ, নথি সংরক্ষণে হিমশিম

জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘মাগুরার শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। সারাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠে বিচারের দাবিতে। সরকারের পক্ষ থেকে বিচারটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।’

এত অল্প সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এ মামলাটি নিষ্পত্তি করায় কোনো পক্ষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হলো কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজ্ঞ বলেন, ‘দেখুন এ বিষয়টি প্রমাণিত হবে উচ্চ আদালতে। এ মামলার সব নথিপত্র উচ্চ আদালতে চলে এসেছে। উচ্চ আদালত এটি দেখে তারপর চূড়ান্ত রায় দেবেন। এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হবে। কাজেই রায় চূড়ান্ত বা মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না রায়ে কোনো পক্ষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছেন।’

এআইএম/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর