বিতর্কিত সব বিচারপতির অপসারণ চান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘যেসব বিচারপতি বিতর্কিত, যারা শপথ লঙ্ঘন করে বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন এবং যারা দলীয় মানসিকতা নিয়ে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন- এসব বিচারপতিকে অনতিবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। শুধু একজনকে অপসারণ কেন, আরও তো অনেকে আছেন।”
ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ‘মানুষ সাংবিধানিক অধিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আসে। সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানাই- অনতিবিলম্বে যেসব বিতর্কিত বিচারপতি আছে, যারা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করেছিলেন, শপথ ভঙ্গ করেছিলেন তাদের পদত্যাগ করতে হবে, নতুবা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে তাদের অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে।’
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
মত প্রকাশের অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্য যেন গণমাধ্যমে প্রচার করতে না পারে, এ নিয়ে হাইকোর্টে আসা হয়েছিল। আমরা তখন প্রতিবাদ করে বলেছিলাম- এটা (মত প্রকাশ) মানুষের মৌলিক অধিকার। তারপর তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রচার করা যাবে না মর্মে হাইকোর্ট থেকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। এটা নিশ্চয় মনে আছে আপনাদের। এটা কী দলীয় দৃষ্টিতে বিচার করা হয়নি?’
ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ‘হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে একই পয়েন্টে আমান উল্লাহ আমানের মামলার আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার আপিল গ্রহণ করে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এটা কেন হবে?’
বিচারকদের উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আপনার রাজনৈতিক চিন্তা থাকতে পারে, রাজনৈতিক বিশ্বাস ও মানসিকতাও থাকতে পারে। যে মুহূর্তে বিচারকের আসনের শপথ নেবেন সে মূহূর্ত থেকে বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন। তখন থেকে আপনি দায়িত্বশীল হবেন। কারণ আপনি তো সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। আপনাদের কর্মকাণ্ডে মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার সুপ্রিম কোর্টের যে ইজ্জত ও মর্যাদা নষ্ট করেছে সেটা কাভার করতে আমাদের অনেক সময় লাগবে।
বিজ্ঞাপন
‘আমরা চাই, যেসব বিতর্কিত বিচারপতি এখনও আছেন। যারা রাজনৈতিক বিচার করেছেন, যারা বায়াসড ছিলেন, যারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। যদি তারা পদত্যাগ না করেন; তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
বিতর্কিত বিচারপতিদের বিরুদ্ধে এতো দেরিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কেন সরকারের প্রতি এমন প্রশ্ন রেখে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘসূত্রতা কেন, কার স্বার্থে এতো সময় নেওয়া হচ্ছে। কারা চেষ্টা করছে তাদের পুনর্বাসিত করতে, তাদের ধরে রাখতে। নিশ্চয় কোনো ষড়যন্ত্রকারীরা গোপনে ব্যবস্থা করেছে। আমি মনে করি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকারের উদ্দেশ্যে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক সংকটের কারণে মামলা জট বাড়ছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ করুন। বিচারক স্বল্পতায় মামলাজট সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। বিচারে দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে খোকন বলেন, বর্তমান সরকারের ভেতরেও সাবেক সরকারের কিছু প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। কে না জানে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রাতের ৮টা, ৯টা, ১০টা পর্যন্ত মোমবাতি জ্বালিয়ে বিচার করা হয়েছে। আজকে তারা কোথায়? এখনও তারা বহাল তবিয়তে আছে। শুধু কয়েকজনকে ট্রান্সফার করা হয়েছে। ট্রান্সফার কি শাস্তি নাকি। বিচারিক আচরণ, নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে যারা রাজনৈতিকভাবে বিচার করেছেন- তাদের অবশ্যই চিহিৃত করতে হবে। যারা রাতের ৮টা, ৯টা, ১০টা পর্যন্ত মোমবাতি জ্বালিয়ে বিচার করেছেন, তাদের চিহিৃত করে বিচার বিভাগ থেকে রিমুভ করতে হবে। আজকে অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস হয়ে গেলেও আইন মন্ত্রণালয়, প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির কেউই উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এটা দুঃখজনক।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে গতকাল (১৯ মার্চ) অপসারণ করা হয়েছে। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয় দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাকে অপসারণ করেছেন।
এআইএম/এমআর