রোববার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

গারদখানায় আমু-কামরুলের পৌনে দুই ঘণ্টা, ফিসফিস আলাপচারিতা

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

গারদখানায় আমু-কামরুলের পৌনে দুই ঘণ্টা, ফিসফিস আলাপচারিতা
আমির হোসেন আমু ও কামরুল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হয়। ছবি: ঢাকা মেইল

গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ১৪ দলের সমন্বয়ক, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এবং আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেফতারের আবেদন মঞ্জুর করেন। এদিন আওয়ামী লীগের প্রভাবশীল এই দুই নেতাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের আগে তাদের আদালতের গারদখানায় রাখা হয় প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা। সেখানে তারা তখন পাশাপাশি বসে ফিসফিস করে আলাপ করছিলেন।

এদিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে এই দুই আসামিকে আনা হয় ট্রাইব্যুনালে। এরপর তাদের নামিয়ে নেওয়া হয় আদালতের গারদখানায়। ১০টা থেকে বেলা ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত তারা এখানেই বসে থাকেন। এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য মামলার আসামিদেরও হাজির করা হয়। একে একে বিচারপতিরা ট্রাইব্যুনালে আসেন। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে আদালত বসার পর তাদের এজলাসের ডকে আনা হয়।


বিজ্ঞাপন


পাশাপাশি বসেছিলেন সাবেক এই দুই মন্ত্রী। আমির হোসেন আমু ডানে এবং অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বামের চেয়ারে বসা ছিলেন। আদালতে আইনজীবীদের শুনানির সময় তারা নীরব ছিলেন। তবে মাঝেমধ্যে দুজন ফিসফিস করে কী যেন বলছিলেন।

এরপর এই মামলার কার্যক্রম আজকের মতো শেষ হলে তাদের নেওয়া হয় গারদখানায়। সেখানে কামরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন তার স্বজন ও পরিচিতজনেরা। কামরুল ইসলাম তাদের তার শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দেন। বলেন, আমার ডায়াবেটিক খালি পেটে ১২ থাকে। তখন কামরুল ইসলামের ছেলে তাকে নিয়মিত ইনসুলিন দেওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়াও তাদের মধ্যে মামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নানা পরামর্শ হয়। এরপর বেলা পৌনে ১টার দিকে এই দুই আসামিকে গারদখানা থেকে বের করে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় তাদের স্বাভাবিক এবং হাসিমুখে দেখা যায়।

Amu

এদিন আদালতে আমির হোসেন আমু ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের পক্ষে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য তাদের আইনজীবীরা আবেদন করেন। তখন আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার আদেশ দেন। শুরুতে আমির হোসেন আমুর পক্ষে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে আইনজীবী নাজমুস সাকিব প্রার্থনা জানান। পরে তার আবেদন মঞ্জুর করা হয়।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (৪ ডিসেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের তোলা হয়। বাকি দুই সদস্য হলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। 

আরও পড়ুন

জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় আমু-কামরুল গ্রেফতার

শুরুতেই এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম এজলাসে আসেন। আমুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে গাজী এম এইচ তামীম আদালতে বলেন, আমির হোসেন আমু ১৪ দলের সমন্বয়ক ছিলেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন। জুলাই-আগস্টে গণহত্যার সময় তার ভূমিকা ছিল মাস্টার মাইন্ডের মতো। সে সময় আন্দোলন দমাতে গণভবনে মিটিংয়ে বসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীসহ ১৪ দলের নেতারা। সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারীদের দমাতে কারফিউ এবং দেখামাত্র গুলির। আন্দোলনকারীদের দমাতে হত্যা-গণহত্যা, বুলেট, রাবার বুলেট ছোড়ার নির্দেশ দেন।

আমুর নির্দেশের পর দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা নিহত হয়। আহত হয় ৩০ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা। এই আসামিকে জামিন দিলে তিনি তদন্তে প্রভাব ফেলবেন। তাকে গ্রেফতারের আর্জি জানাচ্ছি। তখন আদালত আমুকে এই মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৮ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেন।  

Kamrul

এরপর কামরুল ইসলামের বিষয়ে আদালতে অভিযোগ তুলে ধরেন প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ। তিনি বলেন, তদন্ত সংস্থা রিপোর্ট অনুযায়ী কামরুল ইসলামের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগসহ তাদের গুন্ডা বাহিনী নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এমন হামলায় অনেক ছাত্র-জনতা নিহত ও আহত হন। তাকে গ্রেফতারের আর্জি জানাচ্ছি। পরে আদালেত গ্রেফতারের আবেদন মঞ্জুর করেন।

এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৮ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইবুনাল।

আরও পড়ুন

৫০টির বেশি গুমে জড়িত র‌্যাবের ফারুকী ও আলেপ: রাষ্ট্রপক্ষ

এর আগে গত ২ ডিসেম্বর সকালে তাদের গ্রেফতার দেখাতে আবেদন করে প্রসিকিউশন। ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। শুনানি শেষে আদালত এই দুই আসামিকে ৪ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে আছেন।

গত ৬ নভেম্বর আমির হোসেনকে (আমুকে) গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে হত্যার ঘটনার গ্রেফতার দেখানো হয়।

গত ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য কামরুল ইসলামকে গ্রেফেতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাকে গ্রেফতার করে।

এআইএম/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর