আপনি হয়তো কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ, দায়িত্বশীল এবং টার্গেট অর্জনে সদা সচেষ্ট। তবুও অনেক সময় এমন কিছু ছোট ভুল বা আচরণ রয়েছে, যা অজান্তেই আপনার ক্যারিয়ারে বড় ধাক্কা দিতে পারে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক কর্মপরিবেশে শুধু দক্ষতা নয়, প্রয়োজন সচেতনতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা। কারণ, প্রতিষ্ঠানে টিকে থাকার জন্য ‘skill’ এর পাশাপাশি ‘attitude’ এবং ‘behavior’—এই দু’টি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেই কোন কোন কারণে আপনি দক্ষ হয়েও চাকরি হারাতে পারেন।
১. অফিসের রাজনীতিতে অতিরিক্ত জড়ানো
অনেক সময় সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে গিয়ে কেউ কেউ অফিস পলিটিক্সে বেশি জড়িয়ে পড়েন। এতে আপনার ইমেজ নষ্ট হতে পারে, বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যেতে পারে। এই ধরনের আচরণ প্রতিষ্ঠান ক্ষতির চোখে দেখে।
২. সময়ানুবর্তিতা না মানা
যারা নিয়মিত দেরিতে অফিসে আসেন, কাজ জমিয়ে রাখেন বা সময়মতো ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হন, তাদের প্রতি প্রতিষ্ঠানের আস্থা কমে যায়। দক্ষতা থাকলেও এই আচরণ কর্মসংস্থানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

বিজ্ঞাপন
৩. ঊর্ধ্বতনদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ
মনে রাখতে হবে, অফিসে শ্রদ্ধাশীল আচরণ প্রত্যাশিত। কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে অসম্মানজনক বাক্য বিনিময় আপনার ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. কাজের প্রতি উদাসীনতা
দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজকে হালকাভাবে নেওয়া, ইচ্ছাকৃতভাবে সঠিকভাবে না করা কিংবা শুধু বেতনের জন্য অফিসে উপস্থিত থাকা—এসবই চাকরি হারানোর অন্যতম কারণ।

৫. নেতিবাচক মানসিকতা ছড়ানো
সহকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচকতা ছড়িয়ে দেওয়া, অফিসের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করা বা প্রতিনিয়ত অভিযোগ করা কর্মপরিবেশকে বিষিয়ে তোলে। প্রতিষ্ঠান এমন কর্মীকে দীর্ঘদিন সহ্য করতে চায় না।
৬. পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারা
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি ও কৌশলে দ্রুত পরিবর্তন আসে। যারা নতুন জিনিস শিখতে আগ্রহী নন বা পুরনো অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে চান না, তারা ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়েন এবং চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে থাকেন।
৭. অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অহংকার
কোনো কর্মী যদি নিজের দক্ষতা নিয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী হন যে, সহকর্মীদের ছোট করে দেখেন বা ঊর্ধ্বতনদের উপদেশ গ্রহণ করেন না—তবে প্রতিষ্ঠান এমন কর্মীর উপর নির্ভরতা হারিয়ে ফেলে।

৮. অফিসের গোপন তথ্য ফাঁস করা
প্রতিষ্ঠানের ভেতরের তথ্য, পরিকল্পনা বা ক্লায়েন্ট সংক্রান্ত বিষয় ভুল করে হলেও বাইরে ছড়িয়ে পড়লে, তা প্রতিষ্ঠানিক আস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এমন ঘটনায় দক্ষ কর্মীকেও চাকরি হারাতে হতে পারে।
আরও পড়ুন: কখন বুঝবেন আপনার চাকরি ছাড়ার সময় হয়েছে?
৯. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ
অনেক সময় কর্মীরা নিজেদের অফিস বা বস সম্পর্কে ফেসবুক বা অন্যান্য মাধ্যমে নেতিবাচক পোস্ট করে থাকেন। এই আচরণ প্রতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয় এবং চাকরি হারানোর কারণ হতে পারে।
চাকরির জগতে শুধু দক্ষতা নয়, বরং আচরণ, মানসিকতা ও পেশাদারিত্বই আপনার টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি। তাই নিজের কাজের পাশাপাশি অফিসের নিয়মনীতি ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা জরুরি। মনে রাখুন, একটিমাত্র ভুল—যতই আপনি দক্ষ হোন না কেন—আপনার চাকরি কেড়ে নিতে পারে। সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন।
এজেড

