শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘আমি আর আব্বা নিজেদের কথা না ভেবে সেদিন নেত্রীকে খুঁজেছি’

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২, ০১:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আমি আর আব্বা নিজেদের কথা না ভেবে সেদিন নেত্রীকে খুঁজেছি’

আজ রক্তাক্ত ২১ আগস্ট। দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের দিন। একটি নারকীয় হামলার ১৮তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় অল্পের জন্যে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। যিনি তখন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিভীষিকাময় ওই দিনের ভয়াবহতার স্মৃীতিচারণ করেছে তিনি ঢাকা মেইলের সঙ্গে। সাক্ষৎকার নিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক দেলাওয়ার হোসাইন দোলন। 

সাঈদ খোকন বলেন, আমার বাবা মোহাম্মদ হানিফ অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মেয়র ও সেসময়কার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সকলেরই জানা। সিলেটে সেই সময়ের ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলা হয়। সময়টা ছিল দেশের জন্য এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। জনসম্পৃক্তা সহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের আহ্বান করে ২১ আগস্ট। তার দুদিন আগেই আব্বা (প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) একটি তথ্য নেত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে বলেন আমাকে। বার্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে বার্তা নেত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে আমি ছুটে যাই। নেত্রীকে পরিস্থিতিটা বলি। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পরিস্থিতি আছ করতে পারছিলেন ঠিকই।
 
কি সেই বার্তা এমন প্রশ্নের উত্তরে সাঈদ খোকন বলেন- আমি তখন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য। আব্বা (মোহাম্মদ হানিফ) সেই সময়ের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। আব্বা পাঠালেন নেত্রীর কাছে।  নেত্রী সাংগঠনিক সফর শেষে সুধা সদনে বিশ্রাম করছিলেন। বিশ্রামে থাকায় কারও সঙ্গে তিনি দেখা করছিলেন না। রাত তখন ১০টা। আমি সুধা সদনে উপস্থিত হই। সুধা সদনের দোতলায় দেখা হয়, কথা কয় নেত্রীর সাথে। বললাম- আব্বা সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে একটি আশঙ্কাজনক বার্তা দিতে পাঠিয়েছেন। একটি হামলা চূড়ান্ত হয়েছে। হামলার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। হামলাকারী ঢাকার ভেতরে পৌঁছেছে। 
 
পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আব্বা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেলেন নেত্রীকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে। নেত্রীকে তাই বললাম। হয়তোবা হামলার স্থান সুধা সদনের এই বাসা। কিংবা সমাবেশ স্থলে যাতায়াতের পথ। তাও যদি না হয় তাহলে আমাদের অনুষ্ঠানে (সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশস্থল)। আব্বার বলেছেন, যেভাবেই হোক আপনি আমার সাথে আসেন। আমাদের বাসায় আসেন। এখানে মোটেও আপনি নিরাপদ না। নেত্রী আমার সব কথাই শুনলেন। চুপ থাকলেন। 


বিজ্ঞাপন


আরো পড়ুন: কনডেম সেলে ধর্মীয় বই পড়ে সময় কাটে বাবরের

 সময় যতো বাড়ছিল, আমিও স্থির থাকতে পারছিলাম না। নেত্রীকে বললাম-আপনারও অনেক সূত্র থাকে, নেটওয়ার্ক থাকে, আপনি কনফার্ম করে নেন। স্থানটা মোটেও নিরাপদ না। যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। নেত্রী তাও চুপ। কিছু হয়তো ভাবছিলেন। বেশ কিছু সময় চুপ থাকলেন।
 
বারংবার একই কথা বলছিলাম। আমি বলতেই থাকলাম। একর্পায়ে নেত্রী বললেন-এতো ভয় পেলে হবে না। এতো ভয় পেলে কী রাজনীতি হয়? তিনি হাসলেন। আমার মনেও কিছুটা সাহস সঞ্চার হল। নেত্রী হেসে বললেন- এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করছি। নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন না, মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করতে হবে আমাদের। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আরও অনুরোধ করলাম, ওখান থেকে চলে আসতে। একপর্যায়ে নেত্রী আল্লাহর উপর ভরসা করে বললেন- তুই যা, চিন্তা করিস না। আল্লাহ ভরসা। যা হওয়ার হবে। রাত হয়েছে, বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমা, এতো ভয় পেলে রাজনীতি হয় না। দেখা যাবে কী হয়!
 
নেত্রীর বিপদের কথা মাথায় নিয়ে তো আর স্থির থাকতে পারছিলাম না। নেত্রীর দৃঢ়তা দেখে খুব একটা কথা বলতে পারিনি পরবর্তীতে। এক পর্যায়ে নিচে নেমে আসি। মনটা মানছিলো না। থেকে যাই সেখানেই। সারারাত অনেকটা সজাগই ছিলাম। সকালে বাসায় যাই। বিশ্রাম করি। সারারাতের ঘুম যেন ঝেঁকে বসেছিল। দুপুরে প্রস্তুতি নেই সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের। 

আরো পড়ুন: শরীরে আজও ১৮শ স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন মাহবুবা পারভীন

পরিকল্পনাকারীদের প্রস্তুতি ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ের। তাদের লক্ষ্য আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করে দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করা। রাখে আল্লাহ মারে কে। আল্লাহর রহমতে নেত্রী বেঁচে গিয়েছেন। আল্লাহ তাকে দিয়ে কিছু করাবেন বলেই তাকে বাঁচিয়েছেন।
 
বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাঈদ খোকন বলেন-আমার প্রয়াত পিতা তার জীবন দিয়ে নেত্রীকে বাঁচিয়েছেন। প্রত্যক্ষ না করলে অনুমান করাও কঠিন। এ একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। আমরা বাবা-ছেলে ঘটনাস্থলেই ছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই বিপদে কী হয়? বাবা ছেলের কথা চিন্তা করে, ছেলে বাবার কথা। আর আমার বাবা তো একবারও আমার কথা চিন্তা করেননি। তিনি চিন্তা করেছেন তার নেত্রীর কথা। আমিও চিন্তা করেছি, নেত্রী কোথায়?
 
ডিএইচডি/ একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর