শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

কনডেম সেলে ধর্মীয় বই পড়ে সময় কাটে বাবরের

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২, ১০:৪৬ এএম

শেয়ার করুন:

কনডেম সেলে ধর্মীয় বই পড়ে সময় কাটে বাবরের

এক সময় তার স্পাইক করা চুলের স্টাইল অনেককে বিমোহিত করতো। কথার ফাঁকে ফাঁকে বলতেন ভাঙা ইংরেজীও। আর এক কাপড় নাকি দ্বিতীয়বার পরতেন না। ছিলেন সুগন্ধী প্রিয় ও বেশ ঝটপটও। আধুনিক সেই মানুষটির জীবন এখন পুরোটাই বদলে গেছে। চাকচিক্যের সেই জীবন ছেড়ে তাকে বেছে নিতে হয়েছে অন্য এক জীবন। 

এখন তার সময় কাটে ইবাদত বন্দেগি আর ধর্মীয় বই পড়ে। পরিবার, দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও রাজনীতি নিয়ে তার আর কোনো মাথা-ব্যথাও নেই। 


বিজ্ঞাপন


বলছিলাম এক সময়ের আলোচিত সমালোচিত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা বিএনপির নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরের কথা।

মনে আছে কী ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুস’ সেই বাক্যটি। এখনো কারও মুখে শুনলে তার মুখখানি অনেকের চোখে ভেসে ওঠে। বক্তব্যে টেলিভিশনের পর্দা আর মাঠে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তটস্থ রাখা সাবেক সেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নিঃসঙ্গ জীবন কাটছে কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলের প্রকোষ্ঠে। 

এক সময়ের প্রভাবশালী এই নেতার আশেপাশে অনেক তেলবাজ কর্মীদের ভিড় থাকলেও এখন তাদের কেউ আর খোঁজও নেন না। জেল জীবনের নিয়মকে যেনো তিনি আপন করে নিয়েছেন। তাইতো একা একাই আদালতে চলে যান।

babar


বিজ্ঞাপন


সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আট ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ আলোচিত বেশ কয়েকটি ছাড়াও আরও অনেক মামলার আসামি। গ্রেফতারের পর থেকে তাকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে রাখা হয়েছিল। কিন্তু গেল একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর তার ঠিকানা হয়েছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। 

বর্তমান সরকার আসার পর থেকে লুৎফুজ্জামান বাবরের পরিবার আর মিডিয়ার সাথে কথা বলেন না। এমন কি তার গ্রামের বাড়ির উপজেলা পর্যায়ের নেতাদেরও তারা ফোন নম্বর দিতে চায় না। ফলে স্বজনরাও আর কারও সাথে কথা বলতে চান না।

নেত্রকোনার এক বিএনপি নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, তার পরিবার এখন তাকে তেমন দেখতে যায় না। তবে গত মাসে আমার সাথে আদালতে আসলে দেখা হয়েছিল। তার ছেলে এক সময় বিদেশ থাকলেও সম্প্রতি তিনি দেশেই অবস্থান করছেন। 

তার শারীরিক অবস্থাটাও তেমন ভালো নয় বলে দাবি করে তার স্বজন হায়দার আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, তার শরীরের অবস্থা তেমন ভালো না। অ্যাজমারটা বেশি হয় যখন তার বেশি ঠাণ্ডা লাগে আবার বেশি গরম লাগে। আর কারাগারে তো জ্বরের ওষুধ ছাড়া তেমন কিছু মেলেও না। ফলে তিনি ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগে তো তার বোন ও দুলাভাইয়ের চিকিৎসা নিতেন। এখনো তারাই তাকে বিভিন্ন ওষুধ সাজেস্ট করে। সে অনুযায়ী খেয়ে কিছুটা সুস্থ। তবে আগের মতো খেতে পারেন না। 

তিনি আরও বলেন, এখন তার সময় কাটে ইবাদত বন্দেগি ও ধর্মীয় বই পড়ে। আমি মাঝে মাঝে কিছু বই কিনে দিয়ে আসি। সেগুলোই উনি পড়ে সময় কাটান।

সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুই মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। তবে তিনি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টির ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে। 

এদিকে কারাগার সূত্র জানিয়েছে, দুই মামলায় তার ফাঁসির রায় হওয়ায় কারাবিধি অনুযায়ী কয়েদীর পোশাক পরানো হয়েছে। রাখা হয়েছে কনডেম সেলে।

babar

এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

তথ্য অনুয়ায়ী, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে থাকা এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ২০০৭ সালে গ্রেফতার হন। সাত বছর পর ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। এর চার বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বাবরসহ ১৯ জনের ফাঁসির রায় দেয় আদালত।

দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে থাকার এখন তার মুক্তি পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন দলের নেতারা। দশ ট্রাক অস্ত্র ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা এখনো চূড়ান্ত রায় আসেনি। তার নামে দায়ের হওয়া বাকী মামলাগুলো নিম্ন আদালতে চলমান আছে বলে জানা গেছে।

এমআইকে/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর