রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

একদা ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’ শ্রীলঙ্কা এখন ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২২, ০৪:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

একদা ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’ শ্রীলঙ্কা এখন ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখে
কয়েক দশক ধরে ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল শ্রীলঙ্কা- রয়টার্স

চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কায় খাদ্য সংকট আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে। কারণ সারের অভাবে এবার দেশটির প্রধান খাদ্যশস্য ধানের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। শ্রীলঙ্কা কয়েক দশক ধরে প্রধান খাদ্য ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল।

উত্তর শ্রীলঙ্কার কিলিনোচি জেলার বাসিন্দা নাল্লাথাম্বি মহেন্দ্রন চার একর জমিতে পান্না সবুজ ধান চাষ করেছেন। তবে এই সময়ে ধান গাছের যেমন অবস্থা থাকার কথা তেমনটি নেই। এছাড়া ফলনও একেবারে নেই বললেই চলে। 


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় ইউনিয়ন নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, সারের অভাবে এবারের ধান উৎপাদন অনেকটাই কমে যাবে। রয়টার্সের দেখা সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কিলিনোচিতে ১০ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এতে হেক্টর প্রতি ২.৩ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতে পারে। 

sri lanka
কাটা ধানের বস্তা সরাচ্ছেন কৃষক চিন্নাথাম্বি লঙ্কেশ্বরন ও কর্মী মুহাম্মদ মিরান- রয়টার্স

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগের বছরে হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদন হতো ৪.৫ মেট্রিক টন। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রীষ্মের প্রধান ফসলটি আগের বছরের তুলনায় উৎপাদন অর্ধেক কমে যেতে পারে, যা দেশটির সংকটকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেবে।


বিজ্ঞাপন


আধুনিক সময়ের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কায় সারের ঘাটতিই ধান উৎপাদন ব্যহতের জন্য একমাত্র সমস্যা নয়। জ্বালানি সংকটও এর জন্য দায়ী। কারণে ক্ষেতে সেচ, চাল পরিবহনের জন্য খামারের যন্ত্রপাতি এবং ট্রাকের সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া ফসল কাটতেও হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা।

আরও পড়ুন: কীভাবে খাব, বিস্কুটও কিনতে পারি না: শ্রীলঙ্কান যুবকের আহাজারি

এমন অবস্থায় খাদ্য সংকট মোকাবেলা করার জন্য শ্রীলঙ্কাকে ভারত থেকে ক্রেডিট লাইনের পাশাপাশি কয়েক হাজার টন চাল আমদানি করতে হতে পারে। এটি করতে দেশটির বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার করতে হবে। 

শ্রীলঙ্কার পেরাদেনিয়া ইউনিভার্সিটির শস্য বিজ্ঞানের অধ্যাপক বুদ্ধি মারাম্বে বলেন, দেশজুড়ে চলমান 'ইয়ালা' বা গ্রীষ্মকালীন চাষের মৌসুমে ধানের উৎপাদন গড় ২ মিলিয়ন টন হতে পারে। যা আগের বছরের তুলনায় অর্ধেক। 

তিনি বলেন, 'এটি প্রধানত সারের অভাবের কারণে ঘটেছে। অনেক চেষ্টার পর সরকার ইউরিয়া সারের ব্যবস্থা করতে পেরেছিল কিন্তু অনেক এলাকায় তা পৌঁছতে দেরি হয়েছে।'

শ্রীলঙ্কা কয়েক দশক ধরে ধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। তবে সারের ঘাটতির কারণে গত বছর প্রায় দেড় লাখ টন শস্য কিনতে হয়েছে। ২০২২ সালে দেশটি ইতোমধ্যে ৪ লাখ ২৪ হাজার টন খাদ্য শস্য আমদানির চুক্তি করেছে।

sri lanka
ধানক্ষেতে হাঁটছেন নাল্লাথাম্বি মহেন্দ্রান। গত ২৮ জুলাই তোলা ছবি- রয়টার্স

মারাম্বে বলেন, ২০২৩ সালের প্রথম দুই মাসে খাদ্য ঘাটতি কাটাতে বা সেপ্টেম্বরে রোপণ করা 'মহা' ফসল না কাটা পর্যন্ত আরও আমদানির প্রয়োজন হতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত একটি কমিটি বর্তমানে অতিরিক্ত আমদানির প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করছে।

সরকারী মুখপাত্ররা খাদ্য পরিস্থিতি এবং সম্ভবত আমদানি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

শ্রীলঙ্কার ২২ মিলিয়ন মানুষের প্রধান খাদ্য চাল। এটিই দেশটির সবচেয়ে বড় ফসল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৃহত্তর গ্রামীণ অর্থনীতিতে মাছ ধরা ও কৃষিকাজে নিয়োজিত ৮.১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ২ মিলিয়ন মানুষ ধান চাষী।

সূত্র: রয়টার্স

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর