রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কীভাবে খাব, বিস্কুটও কিনতে পারি না: শ্রীলঙ্কান যুবকের আহাজারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০২২, ০৬:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

কীভাবে খাব, বিস্কুটও কিনতে পারি না: শ্রীলঙ্কান যুবকের আহাজারি
রাজআবদিনের টেম্পো এখন ভ্রাম্যমাণ দোকান- আল জাজিরা

স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছেন। সব ধরনের পেশাতেই ধস নেমেছে। কমেছে আয়। মিলছে না কাজ। এমন অবস্থায় দুবেলা দুমুঠো খেতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। অনেকে এই সময়ে না খেয়ে থাকছেন। আবার কেউ কেউ সামান্য খাবারে ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করছেন। 

মোহাম্মদ রাজআবদিন আগে টেম্পো (চার চাকার হলুদ মিনি ট্রাক) চালাতেন। কিন্তু জ্বালানি সংকটের কারণে তার সেই পেশা এখন আর নেই। তার গাড়িটি এখন কলম্বোর পেট্টাহ মার্কেটের একটি রাস্তার কোণে পার্ক করা হয়েছে। এটি শহরের অন্যতম ব্যস্ত শপিং এলাকা। তিনি তার গাড়ির তিনপাশ খুলে একটি ভ্রাম্যমাণ দোকানে পরিণত করেছেন। এখানে তিনি নতুন ও পুরাতন বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করেন।


বিজ্ঞাপন


অভাব ও সংকটের কথা তুলে ধরে রাজআবদিন জানান, কোনোভাবে জীবন পরিচালনা করছি। আমরা এখন ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করি। কীভাবে খাবো?  টাকা কোথায়? বিস্কুট-চকোলেটের মতো আইটেমগুলো এখন বিলাসবহুল মনে হয়। এগুলো কেনাকাটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়েছে। 

তিনি জানান, জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

sri lanka crisis
বৃষ্টি ঠেকাতে পলিথিন দিয়ে দোকান ঢাকছেন রাজআবদিন- আল জাজিরা

রাজআবদিন বলেন, 'আমাদের দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।' দ্বীপরাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষ এখন দিশেহারা। কীভাবে নিজের পরিবার চালাবেন? এমন প্রশ্নের কোনো সহজ উত্তর তাদের কাছে নেই। 


বিজ্ঞাপন


বাবার বড় ছেলে রাজআবদিন। পরিবারের হাল ধরতে দ্রুত কাজে নেমে পড়তে হয়েছে তাকে। স্কুলের পর আর পড়ালেখা করতে পারেননি। তিনি ব্যবসার মন্দার কথা জানিয়ে বলেন, 'গ্রাহকদের কাছে টাকা নেই, তারা কম কিনছে।'

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অনুসারে, জুন মাসে দেশটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে এবং কমপক্ষে ৬ মিলিয়ন শ্রীলঙ্কান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। 

রাজআবদিন বলেন, 'যেহেতু সবজির দাম বেড়েছে, আমরা সেগুলো কম রান্না করছি। আমরা এখন একদিন কাজে না গেলে খাবার খেতে পারি না। মুরগির মাংস এখন দামি খাবারে পরিণত হয়েছে। বাড়িতে বারবিকিউ করার কথা এখন ভাবা যায় না। এমনটি করতে গেলে দুবার ভাবতে হবে।'

sri lanka
রাজআবদিন উচ্চ বিদ্যুৎ বিল দেখাচ্ছেন- আল জাজিরা

আগে সকালে ও দিনশেষে দুধ না পান করলে দিন কাটতো না রাজআবদিনের। এখন সেগুলো অতীত। দেশটিতে ৭৫০ মিলিলিটার দুধের দাম এখন ৪৫০ রুপি। পাশের মিষ্টির দোকান দেখিয়ে রাজআবদিন বলেন, ওদের নিয়মিত গ্রাহক ছিলাম আমি। প্রতিদিনই কিছু না কিছু কিনতাম। কিন্তু এখন পাত্রে সাজানো মিষ্টিগুলোকে মনে হয় এক একটি হিরার টুকরা। এখন ওগুলো কেনার কথা ভাবতেও পারি না।

সংকটের প্রভাব পড়েছে রাজআবদিনের স্ত্রীর ওপরও। আগে গৃহীনি হিসেবে ঘর সামলেছেন তিনি। কিন্তু এখন সংসার টেনে নিতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যান। তার ছেলে ও মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুরা খুবই কষ্ট পেয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় শুধু রাজআবদিনের অবস্থা এমন নয়। লাখ লাখ মানুষের প্রতিচ্ছবি রাজআবদিন। সবাই জীবন সংগ্রামে নেমে পড়েছেন আর আশা নিয়ে চেয়ে আছেন। হয়তো খুব দ্রুত বা আস্তে আস্তে তাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে। ফিরে আসবে আগের দিন।

সূত্র: আল জাজিরা

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর