বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

আফগানদের জন্য এখন বেঁচে থাকাটাই ‘যুদ্ধ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২২, ১০:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

আফগানদের জন্য এখন বেঁচে থাকাটাই ‘যুদ্ধ’

সারি সারি মাটির কুঁড়েঘর। প্লাস্টিকের চালে ছিদ্র হয়ে গিয়েছে। সংকীর্ণ রাস্তার কোণে তাঁবু টানানো। আফগানিস্তানের লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত এবং দরিদ্র মানুষ বড় শহরগুলোর আশেপাশে এমন আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে। সময়ের সাথে সাথে এগুলো এক একটি বস্তিতে পরিণত হয়েছে।

কয়েক দশকের সংঘাত, বিপর্যয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশটির লাখ লাখ মানুষকে এমন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। তাদেরকে অভাব ও সংকট নিজের বাড়ি ছেড়ে আসতে বাধ্য করেছে। আফগানিস্তানে যুদ্ধের সমাপ্তির পর আকস্মিক অর্থনৈতিক পতনের ফলে তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তালেবান সরকার আসার পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট সংকটের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ আফগানদের। 


বিজ্ঞাপন


গত বছরের আগস্টে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর ক্ষমতা দখল করে তালেবান। এরপর দেশটির অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের টিকে থাকার প্রধান পথ ‘বিদেশি সাহায্য’ বন্ধ হয়ে যায়। তালেবান সরকারকে সমর্থন না দেয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটিতে অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ ঘোষণা করে।

afghanistan
শেষ সম্বল বিক্রির চেষ্টায় এক পরিবার- আল জাজিরা

গত এক বছরে দেশের আর্থিক ব্যবস্থার উপর আরোপিত উন্নয়ন সহায়তা এবং সীমাবদ্ধতা প্রত্যাহার করার জন্য কঠোর পদক্ষেপের কারণে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তারল্য সংকট, নগদ অর্থের ঘাটতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থার পতন এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা- আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষকে চরম সীমায় ঠেলে দিয়েছে। দারিদ্রের চরম মাত্রায় পৌঁছেছেন তারা। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। দেশটির অর্থনীতি জটিল আকার ধারণ করেছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ডাক্তার হতে চায় গাজার শিশু লিন, চায় বেঁচে থাকার গ্যারান্টি

অনেক আফগান তাদের সঞ্চয় বা বেতনও ব্যবহার করতে পারছেন না। এছাড়া কোনো কাজ না পাওয়ায় ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় বেশিরভাগ পরিবার ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। 

বেশিরভাগ লোকের খরচ করার মতো কিছুই বেঁচে নেই এবং অনেকে মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ছোট ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের ছায়ায়, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে, যা নিঃস্ব সম্প্রদায়কে আরও বেশি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে।

পায়ের চিকিৎসা ও খাবার পেতে সব জমি বিক্রি করে দিয়েছেন জান মোহাম্মদ- আল জাজিরা
পায়ের চিকিৎসা ও খাবার পেতে সব জমি বিক্রি করে দিয়েছেন জান মোহাম্মদ- আল জাজিরা

নির্মাণস্থলে বা স্থানীয় বাজারে দিন মজুরের কাজ করা সাঈদ বলেন, ‘তালেবান দখলের পর থেকে আমরা কেউই সঠিক চাকরি খুঁজে পাইনি। কোনোরকমে বেঁচে আছি। এখন কোনো কাজ পেলে তা দিয়ে কোনো রকমের দিনের খাবার কেনার টাকা পাই। যে শ্রমিকরা দিনে ৬ ডলার পর্যন্ত আয় করতেন তারা এখন কোনো কাজ পান না। যদি কোনো কাজ পান তাহলে ৭০ সেন্টের বেশি তারা আয় করতে পারেন না।’

আফগানিস্তানে এখন একটি রুটির দাম অন্তত ৬০ সেন্ট। যা দিয়ে ছোট পরিবারের কোনোরকমে একবেলা খাবার হয়। বেশিরভাগ পরিবার নাটকীয়ভাবে খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। দিনে সামান্য যে খাবার তারা পান তা হলো রুটি ও চা।

আরও পড়ুন: সক্ষমতা নেই, নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে সাহায্যের আবেদন তালেবানের

অনেক পরিবার তাদের কাছে থাকা শেষ সম্বলও বিক্রি করার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে যে সামান্য আয় হয় তা দিয়ে আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে তারা। 

আফগানিস্তানের বস্তিতে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাস করে। তাদের জন্য এবং সারাদেশে আরও অনেকের জন্য বেঁচে থাকাটাই একটি যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।

সূত্র: আল জাজিরা

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর