চীনা অর্থায়নে নির্মিত নেপালের পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক ৫ মন্ত্রী, ১০ সাবেক সচিবসহ ৫৫ কর্মকর্তা এবং একটি চীনা ঠিকাদারি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামালা করেছে দেশটির একটি দুর্নীতি দমন প্যানেল।
নেপালের সরকারি কর্তৃপক্ষের অপব্যবহার তদন্ত কমিশন (সিআইএএ) গত রোরবার দুর্নীতি দমন বিশেষ আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়, যেখানে কর্মকর্তা এবং চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের ব্যয় অবৈধভাবে ৭৪ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগপত্রে নেপালের সাবেক পর্যটনমন্ত্রী পোস্ত বাহাদুর বোগাটি, ভীম প্রসাদ আচার্য, রাম কুমার শ্রেষ্ঠ, দীপক চন্দ্র আমাত্য এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী রাম শরণ মহাতসহ অনেক শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তার নাম রয়েছে। এছাড়া চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির চেয়ারম্যান ওয়াং বো এবং আঞ্চলিক জেনারেল ম্যানেজার লিউ শেংচেংকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিশেষ আদালতের সহকারী মুখপাত্র যজ্ঞ রাজ রেগমি বলেন, সিআইএএ প্রকল্পটি নির্মাণকারী চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডসহ প্রতিটি অভিযুক্তের কাছ থেকে জরিমানা হিসাবে খরচের অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ আদায়ের দাবি জানিয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিশেষ আদালত এখন মামলায় অভিযুক্তদের প্রত্যেককে নোটিশ পাঠাবে এবং তাদের কাছ থেকে বিবৃতি পাওয়ার পরই শুনানি শুরু করবে। আদালত কখন শুনানি শেষ করবে এবং রায় দেবে তা আমরা এখনই বলতে পারছি না।’
বিজ্ঞাপন
এদিকে সিআইএএ-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ২৪৪ মিলিয়ন ডলার করেছেন, যা আনুমানিক ১৭০ মিলিয়ন ডলার ছিল। প্রকল্পের ব্যয় হিসাব অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে প্রায় ৭৪ মিলিয়ন ডলার বেশি পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ আগস্টের বিনিময় হার অনুযায়ী এই অর্থ ৮৩৬ কোটি নেপালি রুপির সমান। চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে এই অর্থ প্রদান করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পোখরায় বিমানবন্দরটি ২০২৩ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল কিন্তু কোনো আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা সেখান থেকে ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহ দেখায়নি।
এরআগে প্রকল্পটি বহু বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গোপন চুক্তি, অস্বচ্ছ দরপত্র এবং নানা বিতর্কে জর্জরিত ছিল। ১৯৭৫ সালে জমি অধিগ্রহণের পর বহু দফায় পরিকল্পনা সংশোধন ও স্থবিরতার মধ্য দিয়ে এটি এগিয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিটি শুরু থেকেই ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ প্রকল্প দখলের চেষ্টা করেছে। ২০১১ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বার্ষা মান পুন গোপনে সিএএমসির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন, যা পরে সংসদীয় কমিটিতে ফাঁস হয় এবং প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়। পরে ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে দরপত্র, ব্যয় নির্ধারণ ও পরামর্শক নিয়োগে নানা অনিয়ম ঘটে। দরপত্রে চীনা প্রতিষ্ঠানের ‘বিশেষ সুবিধা’ নিশ্চিত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে শন্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু করে নেপালের তরুণ প্রজন্ম। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১৯ জনের প্রাণহানির পর রাজধানী কাঠমাণ্ডুসহ দেশজুড়ে সহিংসতা বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যেই প্রাণ হারান ৭৬ জন। যার জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি।
অলির পদত্যাগের তিন দিনের মাথায় দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। দায়িত্ব নিয়েই আগামী বছরের মার্চে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়াও আগের সরকারের দুর্নীতির বিচার করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কার্কি।
সূত্র: রয়টার্স, কাঠমান্ডু পোস্ট
এমএইচআর

