নেপালের অর্থনৈতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে পর্যটন খাতের। দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৬.৭ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। তবে সরকারবিরোধী জেন-জি বিক্ষোভে সহিংস পরিস্থতিতে নেপালের পর্যটন খাতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে খাত সংশ্লিষ্টরা। আন্দোলনের সময় হোটেল ভাঙচুর, যাত্রা বিঘ্নিত হওয়া এবং শত শত বুকিং বাতিলের হয়েছে এবং এই ঘটনা এমন সময় ঘটল যখন দেশটির পর্যটন মৌসুমের শুরু হয়েছে।
হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপালের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমপক্ষে দুই ডজন হোটেল ভাঙচুর বা লুটপাটের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর কাঠমাণ্ডুর বিলাসবহুল হিলটন হোটেলের ক্ষতিই প্রায় ৮০০ কোটি রুপি ছাড়িয়েছে। এছাড়াও পোখরা, ভৈরহাওয়া, বিরাটনগর ও ধানগাধির মতো মূল পর্যটন কেন্দ্রগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে নেপাল পর্যটন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা এই খাত পুনরুদ্ধারে আশাবাদী।
নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও দীপক রাজ জোশী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছি এবং পর্যটন অবশ্যই পুনরুজ্জীবিত হবে।’ এক্ষেত্রে তিনি ২০১৫ সালের ভূমিকম্প ও কোভিড-১৯ মহামারীর পরের পুনরুদ্ধারের অভিজ্ঞতা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
নেপালি অর্থনীতিবিদ ড. সামির খাতিওয়াদা এবং দেশটির শিল্প নেতারা অন্তবর্তী সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ এবং প্রায় ১৫ হাজার বিদেশি পর্যটকের নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপালের চেয়ার বিনায়ক শাহ বলেছেন, পর্যটন মৌসুম শুরু হতে চলেছে। তাই নেপাল থেকে ইতিবাচক বার্তা প্রেরণ করা জরুরি। সকল অংশীদারকে একজোট হয়ে পর্যটন পুনরুদ্ধারের কাজ এগিয়ে নিতে হবে।
ট্রেকিং এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল এবং মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের মতো অন্যান্য অংশীদারও পর্যটকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও নেপালের পর্যটন দ্রুত পুনরুদ্ধারে একত্রিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে রাজনৈতিক পালাবদলের পর নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। আর নতুন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরতে শুরু করেছে হিমালয়ের দেশটি।
শুত্রবার প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পরই দেশটির বেশিরভাগ অংশে আরোপিত কারফিউ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিক্ষোভের কারণে গত পাঁচ দিন ধরে বন্ধ থাকার পর কাঠমান্ডুতে গণপরিবহন পুনরায় চালু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন-জির নেতৃত্বে শুরু হওয়া দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তবে তার পদত্যগের পরও দেশটিতে অস্তিরতা অব্যহত থাকে। দেশটির সংসদ-সহ একাধিক সরকারি এবং নেতাদের ব্যত্তিগত ভবন লুটপাট ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিক্ষোভ-সহিংসতায় অন্তত ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে এক ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ।
সূত্র: দ্য হিমালিয়ান টাইমস
এমএইচআর

