সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন-জি বিক্ষোভে উত্তাল নেপালে রাজনৈতিক পালাবদলের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। আর নতুন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দ ফেরানোর চেষ্টা চলছে নেপালে।
প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পরই দেশটির বেশিরভাগ অংশে আরোপিত কারফিউ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিক্ষোভের কারণে গত পাঁচ দিন ধরে বন্ধ থাকার পর কাঠমান্ডুতে গণপরিবহন পুনরায় চালু হয়েছে। তবে, কাঠমান্ডুর কিছু জায়গায় সমাবেশ এবং বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, বিক্ষোভের সময় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সামগ্রী পুরনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন অফিসে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভের সময় সিংহ দরবারে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের কার্যালয় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিংহ দরবারের উত্তর-পশ্চিম অংশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্মিত নতুন ভবনে তার কার্যালয় প্রস্তুত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।
এদিকে বিক্ষোভের সময় আহতদের সঙ্গে দেখা করতে শনিবার সকালে ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টার এবং সিভিল সার্ভিস হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি। এসময় হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আহতদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন তিনি।
কাঠমান্ডু ভ্যালি ট্র্যাফিক পুলিশ অফিসের মুখপাত্র এবং পুলিশ সুপার (এসপি) দীপক গিরিকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রাষ্ট্রীয় সমাচার সমিতি জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে পাবলিক বাস, ট্যাক্সি এবং অন্যান্য সরকারি যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, কাঠমান্ডুর থেকে অন্যান্য জেলাগামী যাওয়া যানবাহনকে শনিবার সন্ধ্যা থেকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে।
এর আগে নেপাল সেনাবাহিনী কাঠমান্ডু উপত্যকায় যে কারফিউ জারি করেছিল তা শনিবার সকাল থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে কাঠমান্ডুর ছয়টি স্থানে জমায়েত এবং অনশন, ধর্মঘট, অবস্থান, ঘেরাও, বিক্ষোভ এবং সভা আপাতত নিষিদ্ধ থাকবে। সিংহ দরবার, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিস্টস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ হিউম্যান রাইটস এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনের শাসন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ওপর নজর দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
এরআগে গতকাল শুক্রবার রাতে নেপালের রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন শীতল নিবাসে সুশীলা কার্কিকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওদেল। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন সুশীলা। তিনিই হলেন নেপালের নারী প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্কি শপথ নেওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই শুক্রবার গভীর রাতে সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেওয়া হয় এবং ২০২৬ সালের ৫ মার্চ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন-জির নেতৃত্বে শুরু হওয়া দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তবে তার পদত্যগের পরও দেশটিতে অস্তিরতা অব্যহত থাকে। দেশটির সংসদ-সহ একাধিক সরকারি এবং নেতাদের ব্যত্তিগত ভবন লুটপাট ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিক্ষোভ-সহিংসতায় অন্তত ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে এক ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ।
সূত্র: বিবিসি
এমএইচআর

