ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে সাহসিকতাপূর্ণ নেতৃত্বের জন্য পুরো জাতির কাছে বিশেষভাবে সম্মানিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ অসীম মুনির। আর এই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিকে সরিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতে চান বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে দেশটির রাজনৈতিক মহল এবং মিডিয়া পাড়ায়। তবে পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক উভয় নেতৃত্বই গুঞ্জনের সত্যতা নেই বলে দাবি করেছে।
বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনোমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী এই ‘অর্থহীন ছাইপাঁশ’ উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সেনাপ্রধান দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চান— এ তথ্যের কোনো সত্যতা নেই এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
গত মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ নিজেও এই দাবিকে ‘নিছক গুঞ্জন’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির কখনো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি এবং ভবিষ্যতেও তার এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং ফিল্ড মার্শাল মুনির পারস্পরিক বিশ্বাস এবং জাতীয় স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে একটি কার্যকরী সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।’
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি এই গুঞ্জনকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা’ উল্লেখ করে বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণার পেছনে আছে কারা আছেন, তা আমরা ভালো করেই জানি। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান অসিম মুনিরকে লক্ষ্য করে এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি—প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে বা সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট হতে আগ্রহী- এমন কোনো আলোচনা হয়নি, এমনকি এ ধরনের কোনো চিন্তাও নেই।’
কেন এই গুঞ্জন?
ভারতের সঙ্গে সংঘাতে অপারেশন ‘বুনিয়ান উল মারসুস পরিচালনা’ করে পাকিস্তান এবং তাতে নেতৃত্ব দেন সেনাপ্রধান অসীম মুনির। সাহসিকতা ও কৃতিত্বের সঙ্গে এ অভিযান পরিচালনা করায় তাকে গত মে মাসে ‘জেনারেল’ পদবী থেকে ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত করে পাকিস্তান সরকার।
মূলত এই পদবী পাওয়ার পর থেকেই এই গুঞ্জন আরও তীব্র হয়। কারণ ১৯৫৮ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর নিজেই নিজেকে ফিল্ড মার্শাল পদবী দিয়েছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান আইয়ুব খান।
তবে পাকিস্তানের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, জেনারেল মুনিরের পদোন্নতির কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই এবং এটি ক্ষমতা দখলের দিকে ঝুঁকতে ইঙ্গিত দেয় না।
ফিল্ড মার্শাল কী?
ফিল্ড মার্শাল পদমর্যাদা সম্মানসূচক এবং মূলত আনুষ্ঠানিক। এটি সামরিক সিদ্ধান্ত বা রাজনৈতিক বিষয়ে কোনও অতিরিক্ত কর্তৃত্ব প্রদান করে না। এই পদটি ব্যতিক্রমী যুদ্ধকালীন সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয় এবং এটি ব্রিটিশ সামরিক ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত, যা পাকিস্তান উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে।
এদিকে উচ্চ সামরিক মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও, ফিল্ড মার্শাল জেনারেল মুনির পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি পদে আসার কোনও আইনি পথ রাখেন না, অন্তত কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন বা সামরিক অভ্যুত্থান ছাড়া।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করা জেনারেল মুনির পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অন্যতম সম্মানিত কর্মকর্তা। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে পাকিস্তানের মাঙ্গলা অফিসার্স ট্রেইনিং স্কুলে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। বিশেষ কৃতিত্ব দেখানোর জন্য সেখানেই সোর্ড অব অনার পেয়েছিলেন তিনি।
সেনা প্রধানের হওয়ার আগে দেশটির সামরিক গোয়েন্দা (এমআই) এবং ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর মহাপরিচালক সহ উচ্চ-স্তরের কমান্ড এবং গোয়েন্দা পদে দায়িত্ব পালন করেছেন মুনির।
সূত্র: গালফ নিউজ
এমএইচআর

