গাজায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ কেন্দ্র এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য দাতাগোষ্ঠী পরিচালিত কনভয়গুলোতে ত্রাণ নিতে গিয়ে গত ছয় সপ্তাহে কমপক্ষে ৮৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস (ওএইচসিএইচআর)।
বিজ্ঞাপন
জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার কার্যালয়ের মুখপাত্র থামিন আল-খিতান বলেন, ‘১৩ জুলাই পর্যন্ত আমরা গাজায় খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করার সময় ৮৭৫ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি রেকর্ড করেছি। তাদের মধ্যে ৬৭৪ জন জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্রে বা এর কাছে নিহত হয়েছেন। বাকি ২০১ জন নিহত হয়েছেন জাতিসংঘ বা জাতিসংঘের অংশীদারদের পরিচালিত ত্রাণ কনভয়ের পথে বা কাছাকাছি এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে গিয়ে।’
ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র আরও বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তা বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য উৎসের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা মানবাধিকার এবং মানবিক সংস্থাগুলো।
এদিকে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৬ মে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তাদের খোলা চারটি ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
মিডিয়া অফিস বলছে, ‘এই তথাকথিত “ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে” যা ঘটছে তা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধাপরাধ, যার জন্য ইসরায়েলি দখলদারিত্ব প্রাথমিক এবং প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। আমরা এই চলমান অপরাধের তীব্র নিন্দা জানাই, যেখানে ক্ষুধার্ত বেসামরিক নাগরিকদের প্রলুব্ধ করা হয় এবং তারপর পূর্ব-নির্ধারিত সময়সূচী অনুসারে প্রতিদিন নিয়মতান্ত্রিকভাবে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।’
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস আরও জানিয়েছে, ‘দখলদাররা খাদ্যকে গণহত্যার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যাকে তারা “সহায়তা” বলে দাবি করে কিন্তু ধ্বংস ও আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ারে পরিণত করছে।’
প্রসঙ্গত, ১১ সপ্তাহ ধরে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে অবরোধের পর আন্তর্জাতিক চাপে গত ২৬ মে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় জিএইচএফ— ত্রাণ বিতরণ সংস্থা খোলার ঘোষণা দেয় ইসরায়েলি।
জাতিসংঘসহ অন্যান্য খাদ্য সংস্থা জিএইচএফর এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছে, এই উদ্যোগ মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে এবং ত্রাণকে রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ঝুঁকি তৈরি করে।
ইসরায়েল অবশ্য বলছে, হামাস যাতে ত্রাণ চুরি না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই জিএইচএফ চালু করা হয়েছে। যদিও ইসরায়েলের এই চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, তারা শুধু সৈন্যদের দিকে এগিয়ে আসা জনতাকে লক্ষ্য করে সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছে, কিন্তু হতাহতের বিষয়ে তারা অবগত নয়।
সূত্র: আলজাজিরা, ইউএন নিউজ
-এমএইচআর

