গাজা উপত্যকার উত্তরে সংঘর্ষের সময় সোমবার (স্থানীয় সময়) ইসরায়েলের তিন সেনা নিহত ও একজন অফিসার গুরুতর আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্যমতে, নিহত সেনারা একটি ট্যাঙ্কে ছিলেন, যা সম্ভবত অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্রে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
মৃত সেনারা সবাই ৪০১তম সাঁজোয়া ব্রিগেডের ৫২তম ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, বিস্ফোরণটি শত্রুপক্ষের হামলার ফল হলেও, অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
সেনাবাহিনীর প্রকাশিত নাম অনুযায়ী নিহতরা হলেন: স্টাফ সার্জেন্ট শোহাম মেনাহেম (২১); সার্জেন্ট শ্লোমো ইয়াকির শ্রেম (২০); সার্জেন্ট ইউলিয়ি ফ্যাক্টর (১৯)।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে বহু ইসরায়েলি সেনা প্রাণ হারিয়েছেন, এবং বহু নাগরিক এখনো হামাসের হাতে বন্দি। তাদের মুক্তিতে অগ্রগতির অভাব এবং যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিষ্কার পরিকল্পনার অভাবে সরকারকে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়তে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তিনি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনায় যেতে প্রস্তুত, তবে শর্ত একটাই—হামাসকে অস্ত্রসমর্পণ করতে হবে। তবে, এই অবস্থান নিয়ে সমালোচকদের মতে নেতানিয়াহু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন মূলত তার জোটসঙ্গী কট্টর ডানপন্থী নেতাদের সন্তুষ্ট রাখতে।
‘মানবিক শহর’ পরিকল্পনা ঘিরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ইসরায়েল সরকার গাজার দক্ষিণে একটি “মানবিক শহর” গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে যুদ্ধের পর লক্ষাধিক গাজাবাসীকে পুনর্বাসন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এই পরিকল্পনাকে ‘ঘনত্ব শিবির’ বলে বর্ণনা করেছে।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের নিজস্ব নিরাপত্তা মহলেও এই প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা মহলের মতে, এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন এবং তা আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে এক বৃহৎ হামলা চালায়, যাতে প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং প্রায় ২৫০ জন অপহৃত হন। এ ঘটনার জবাবে ইসরায়েল গাজায় পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে, যার ফলে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিহত ও গৃহহীন হয়েছেন।
গাজায় সামরিক অভিযান দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জনগণের একাংশ যুদ্ধের অবসান ও বন্দিদের মুক্তির দাবি তুলেছে, অপরদিকে কট্টরপন্থী অংশ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। এই বিভাজনই প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্য প্রধান রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। -সূত্র: আলজাজিরা
/ একেবি/

