রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আটকে পড়া ইরানি হাজিরা সৌদিতে ‘রাজকীয় অতিথি’, যেসব সুবিধা পাচ্ছেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

আটকে পড়া ইরানি হাজিরা সৌদিতে ‘রাজকীয় অতিথি’, যেসব সুবিধা পাচ্ছেন

সৌদি বাদশাহ ও প্রিন্সের নির্দেশে আটকে পড়া ইরানি হাজিদের ‘রয়েল গেস্ট’ মর্যাদায় সবধরনের সেবা দিচ্ছে সরকার

ইরান থেকে হজ পালনে আসা হাজারো মুসল্লি হজশেষে নিজ দেশে ফিরতে না পেরে সৌদি আরবে আটকে পড়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার জেরে ইরান নিজ দেশের আকাশপথ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুলআজিজ ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এক মানবিক সিদ্ধান্তে বলেন, ইরানের সকল হাজি যতদিন সৌদি আরবে থাকবেন, ততদিন তাঁরা ‘রয়েল গেস্ট’ (রাজকীয় অতিথি) হিসেবে সম্মান ও সেবাপ্রাপ্ত হবেন।


বিজ্ঞাপন


সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানায়, ১৩ জুন বাদশাহ সালমান হজ ও ওমরা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ইরানি হাজিদের সেবায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেন। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই সিদ্ধান্তের প্রস্তাবনা দিয়ে বলেন, ‘ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে আসা কোনো ব্যক্তিকে রাজনৈতিক বা কারিগরি কারণে দুর্ভোগে পড়তে দেওয়া উচিত নয়।’

গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সালমান ঘোষণা দেন যে, ইরানি হাজিরা যেন ‘রয়েল গেস্ট’ হিসেবে বিবেচিত হন; এই নির্দেশ ক্রাউন প্রিন্সের প্রস্তাবে দেওয়া হয়েছে। যতিদিন তারা সৌদি আরবে অবস্থান করবেন, ততদিন তাদের সর্বাত্মক সহায়তা ও সেবা দিতে হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাজিদের ফেরার পথে সমস্যা

হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ইরানের হাজিরা নিজ দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে আঞ্চলিক উত্তেজনার জেরে ইরান তার আকাশপথ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে বহু ফ্লাইট বাতিল হয়। তাতে হাজিদের একটি বড় অংশ জেদ্দা ও মদিনায় আটকে পড়েন।


বিজ্ঞাপন


সৌদি আরবের সহায়তা ও সুরক্ষা

হাজিদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সৌদি সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটকে পড়া হাজিদের মানসম্মত আবাসন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে যেন তাঁরা সম্মানজনকভাবে অবস্থান করতে পারেন।

যেসব সুবিধা পাচ্ছেন ইরানি হাজিরা

১. সম্পূর্ণ আবাসন সুবিধা: সৌদিতে অবস্থানকালীন সময় হাজিদের জন্য মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে।

২. খাদ্য ও প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ: নিয়মিত খাবার, পানীয় ও অন্যান্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা হবে।

৩. ফ্রি চিকিৎসাসেবা ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা: চিকিৎসা সহায়তা ও স্বাস্থ্যপরীক্ষা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত থাকবে মেডিকেল টিম।

৪. নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও প্রহরা ব্যবস্থা: হাজিদের নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী ও নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৫. ফ্লাইট ও যাত্রাব্যবস্থাপনার সহযোগিতা: নিজ দেশে ফেরার উপযুক্ত সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত হাজিদের যাত্রা সংক্রান্ত সকল সহযোগিতা দেওয়া হবে।

৬. সরকারি পর্যায়ের সরাসরি তত্ত্বাবধান: হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় বিষয়টি সরাসরি দেখভাল করছে; প্রয়োজনে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও সম্পৃক্ত হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত একটি মানবিক ও কূটনৈতিক বার্তা বহন করে। ইরান-সৌদি সম্পর্কের সাম্প্রতিক উন্নয়ন এবং হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদির আন্তরিকতা এই পদক্ষেপে প্রতিফলিত হয়েছে।

এ বছর ১৬ লাখের বেশি মুসলমান হজে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ইরানি হাজিদের সংখ্যা ছিল ৮৫ হাজার। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক হামলার ফলে ইরান ও ইরাক আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়, যার কারণে অনেক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তারা সৌদি আরবে আটকে পড়েন।

সূত্র: এসপিএ, আরব নিউজ, গালফ নিউজ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর