অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তান ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিল কিনা, এ নিয়ে এতদিন গোটা বিশ্বেই জল্পনা চলছিল।
আর সেটিরই ইতি টেনেছেন দেশটির সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহান। এতে বিরোধীদের সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকার।
বিজ্ঞাপন
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এপ্রিলে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। ভারতের অপারেশন ‘সিঁদুরের পর’ পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের সামরিক বাহিনী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
পাকিস্তান জানায়, ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৩টি রাফাল যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে তারা। এ নিয়ে নয়াদিল্লি এতদিন নীরব থাকলেও মুখ খুলেছেন ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক।
গত ১০ মে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি ঘোষিত হয়। তারপর তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও ভারত সরকার এ ব্যাপারে কিছু বলেনি।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি। অবশেষে মুখ খুললেন ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহান।
বিজ্ঞাপন
সিঙ্গাপুরে সাংগ্রিলা ডায়লগে অংশগ্রহণ করার ফাঁকে বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। ব্লুমবার্গ টিভির প্রশ্নে চৌহান কার্যত স্বীকার করেন, অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানের আঘাতে ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে।
সর্বাধিনায়ককে প্রশ্ন করা হয়, পাকিস্তান কি ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিল? এক বা একাধিক? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি চৌহান।
আরও পড়ুন: সিকিমে আটকা পড়েছেন ১৫০০ পর্যটক, নিখোঁজ ৮
তিনি বলেন, আমাদের কাছে যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়া বা তার সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন সেটা ধ্বংস হল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তার মানে অন্তত একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের হামলায় ধ্বংস হয়েছিল? এর জবাবে সংক্ষেপে ‘হ্যাঁ’ বলেন চৌহান।
তার ভাষায়, গোটা ঘটনার ইতিবাচক দিক, আমরা কৌশলগত ভুলটা দ্রুত ধরে ফেলেছি। ভুল শুধরে নিয়ে দুদিনের মধ্যে আবার নতুন কৌশল প্রয়োগ করেছি।
ব্লুমবার্গের সাংবাদিক সরাসরি প্রশ্ন করেন, পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের হামলায় ভারতের অন্তত ছয়টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। এটা সত্যি? এই প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের দাবি খারিজ করে দেন চৌহান।
সেনা সর্বাধিনায়কের মন্তব্য সামনে আসার পরে বিরোধীরা নিশানা করেছে মোদি সরকারকে। তারা প্রশ্ন তুলেছে গোপনীয়তা নিয়ে। দেশবাসীকে এই বিষয়ে না জানানোর উদ্দেশ্য নিয়েও সমালোচনা করেছে তারা।
দেশের মানুষের আগে বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে তা কেন জানানো হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার এমপি সাগরিকা ঘোষ।
তিনি সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন করেন, বিদেশি সংবাদমাধ্যম কেন প্রথমে এই খবর বের করবে? এই তথ্যগুলো কেন প্রথমে ভারতীয়দের, দেশের সংসদকে এবং জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়নি?
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বক্তব্য, সর্বাধিনায়কের মন্তব্য নিয়ে আলোচনা করা উচিত সংসদের বিশেষ অধিবেশনে। কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশকে বিভ্রান্ত করেছে। যুদ্ধ নিয়ে ধোঁয়াশা এখন অনেকটাই স্পষ্ট।
কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, আমাদের পাইলটরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আমাদেরও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা পাইলটদের সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানাই।
কংগ্রেসের দাবি, কারগিল যুদ্ধের পরে যেভাবে পর্যালোচনা কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, ঠিক সেভাবে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে। তারা যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি তদন্ত করে দেখবে।
এছাড়াও কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের প্রশ্ন রয়েছে যুদ্ধবিরতি ঘিরে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি হয়েছে কিনা, এ নিয়েও সরকারের জবাব চাইছে তারা। এ বিষয়েও ব্লুমবার্গ টিভি সেনা সর্বাধিনায়ককে প্রশ্ন করলেও সরাসরি জবাব দেননি চৌহান।
খাড়গে বলেন, যুদ্ধবিরতির শর্ত কী ছিল? তাহলে কি কোথাও সমঝোতা হয়েছে? আমাদের কি আপস করতে হয়েছে?
শুক্রবার ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি বাণিজ্য বন্ধের কথা বলে দুই দেশকে সংঘর্ষবিরতির পথে নিয়ে এসেছেন। তার বক্তব্য, আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছিলাম, এমন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চালাতে পারবো না, যারা পরস্পরের দিকে গুলি ছুঁড়ছে। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পথে হাঁটছে। এটা বুঝতে পেরে ওরা সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়েছে।
ট্রাম্পের বক্তব্য, যুদ্ধ থামাতে সক্ষম হওয়া আমার কাছে গর্বের। ওরা যেটা বুলেট দিয়ে করতে চেয়েছে, আমরা বাণিজ্য দিয়ে করেছি। তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে সেনা সর্বাধিনায়ক মানতে চাননি।
বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, পারমাণবিক যুদ্ধ ও সাধারণ সংঘর্ষের মধ্যে অনেক তফাৎ। পরমাণু যুদ্ধ পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেকগুলো পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। পরমাণু যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি আদতে তৈরি হয়নি।
-এমএমএস