মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিশৃঙ্খল সিরিয়া পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ

মুহাম্মাদ শোয়াইব
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

বিশৃঙ্খল সিরিয়া পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়া এক নতুন যাত্রাপথের মুখোমুখি। দীর্ঘদিনের শাসনব্যবস্থার পতন স্বস্তির পাশাপাশি উদ্বেগও এনেছে। সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির শঙ্কা এখন নতুন প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নিরাপত্তা কাঠামো ভেঙে পড়ায় শূন্যতা পূরণে উত্তরাঞ্চল থেকে বাহিনী আনা হয়েছে। এ বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ভিন্নমতাবলম্বী পুলিশ অফিসার ও নন-কমিশনড অফিসাররা, যারা এই কাজের অভিজ্ঞ।

আবু আহমেদ ও তার বিশেষ বাহিনী পুরনো রাজনৈতিক গোয়েন্দা সদর দফতরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের তদন্ত করছেন। সদর দফতরটি একসময় আসাদ সরকারের বিরোধীদের গ্রেফতার ও দমনে ব্যবহৃত হতো। সেখানে উদ্ধার কাজ চলছে। উদ্ধার করা রেকর্ডের মধ্যে আটককৃতদের তালিকা, ডিক্রি ও আদেশ পাওয়া গেছে, যা শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সম্ভাব্য যোগাযোগের ইঙ্গিত রয়েছে। রাশিয়ার সমর্থনে শাসক গোষ্ঠীর আইএসআইএসের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগও উঠে এসেছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

পশ্চিমাদের শর্ত ও ইসরায়েলের উদ্বেগ এবং সিরিয়ার ভবিষ্যৎ

নতুন প্রশাসনের জন্য কাজের পরিমাণ ও জটিলতা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবু আহমেদ জানান, প্রাথমিক দিনগুলোতে তারা সম্পদহীন অবস্থায় অফিস চালিয়েছেন। তাদের কোনো কাগজপত্র, কর্মী বা অস্ত্র ছিল না। তবে উত্তরের স্বশাসনের অভিজ্ঞতা এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে সহায়ক হয়েছে। মাত্র সাত বছরে ইদলিবকে নিরাপদ এলাকায় পরিণত করার দাবি করেন তিনি।

এদিকে, দামেস্কের রাস্তায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চিত্র দেখা গেলেও উদ্বেগ পুরোপুরি কাটেনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে, তবে বাস্তব পরীক্ষাটি হবে ক্রান্তিকালের পর। নতুন প্রশাসনের জন্য আসাদের অনুগতদের সম্ভাব্য নাশকতা মোকাবিলা এবং পুরনো শাসনের অবশিষ্টাংশ মুছে ফেলার কাজ সহজ হবে না।

SS


বিজ্ঞাপন


ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক রব জি পিনফোল্ড মনে করেন, পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন ও সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, এইচটিএস পুরো সিরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। তাই তাদের অন্য গোষ্ঠী ও প্রাক্তন আসাদ যোদ্ধাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। ইদলিবে এইচটিএস তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও, অন্য শহুরে এলাকায় একই পদ্ধতি কার্যকর হবে না।

রাজনৈতিকভাবে, আহমেদ আল-শারা আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিশেষ করে লেবাননের ড্রুজ নেতা ওয়ালিদ জাম্বলটের সঙ্গে তার বৈঠক উল্লেখযোগ্য। এটি সংখ্যালঘুদের উদ্বেগ দূর করার এবং সিরিয়া-লেবানন ঐতিহাসিক সম্পর্কের উন্নয়নে ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে, ইরান ও হিজবুল্লাহর মতো আঞ্চলিক প্রভাব মোকাবিলা করা নতুন প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন

আমিরাত ও নতুন সিরিয়ার সংযোগে সম্ভাবনার হাতছানি

পরিবর্তনের এই সময়ে আশ-শারার দ্রুতগতির পদক্ষেপকে সময়োপযোগী বলা হলেও, জনগণের সমর্থন চিরস্থায়ী হবে না। এইচটিএস-এর অধীনে পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তাহলে মানুষ দ্রুত হতাশ হবে। তাই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অতএব, নতুন প্রশাসনের সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক, তবে এটি একটি সুযোগও বটে। সঠিক নেতৃত্ব ও কৌশলে, সিরিয়া তার নতুন পথ খুঁজে নিতে পারে। আশ-শারার জন্য আসল পরীক্ষা হবে তার কাজ এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জনগণের আস্থা ধরে রাখা।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর