বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক ইতিহাস পুনর্লিখন শুরু করছে ভারত। অনেক প্রাক্তন উপনিবেশ এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিকে ভারতের সাফল্যের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যা দৃঢ়তা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার গল্প উপস্থাপন করে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্রমকে পুনর্গঠন করছে।
এস এন্ড পি গ্লোবাল রেটিংস সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৩০ সালের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে চলেছে ভারত। দেশটির এই উত্থান একটি ঐতিহাসিক সাফল্য যা এক সময় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে নিপীড়িত ছিল।
বিজ্ঞাপন
ভারতের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ
ভারতের অর্থনীতি এমন গতিতে বাড়ছে যা অনেক দেশকে বিস্মিত করছে। ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার বর্তমানে চীনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের তিনগুণ। ফলে এটি বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে।
বৃদ্ধির কৌশল
ভারত বুঝতে পেরেছে যে এই অসাধারণ উত্থান বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর দ্বারা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। ভারত তার অর্থনৈতিক উন্নয়নের যাত্রায় রাশিয়া এবং ব্রিকস দেশের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
২০১০ এর দশকের প্রথম দিকে, ভারত রাশিয়ার রোসাটমের সঙ্গে "মেক ইন ইন্ডিয়া" কর্মসূচির আওতায় একটি বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। এই পারমাণবিক কর্মসূচির ফলস্বরূপ ভারত বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক সরবরাহকারী পার্ক স্থাপন করেছে। শুধু তাই নয়, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি ভারতের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কোরিয়া, চীন ও রাশিয়ার পাশাপাশি পাঁচটি প্রধান পারমাণবিক সরবরাহকারী দেশের মধ্যে একটি হিসেবে গণ্য হবে।
ভারত সরকারের সাফল্য উদযাপন এবং অনুকরণ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এমন একজন মানুষ হিসেবে সম্মানিত করা উচিত যিনি সত্যিকার অর্থে তার দেশকে প্রথমে রাখেন। ফলে, দেখা যায় যে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রধান দেশগুলি, যার মধ্যে জাপানও রয়েছে, প্রায়শই ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক যুদ্ধ বাঁধায় না, যেমনটি তারা প্রায়শই পশ্চিম ইউরোপের প্রাক্তন উপনিবেশ দেশগুলির সঙ্গে করে।
ভারতের স্পষ্ট ও সুস্পষ্ট নীতিগত লক্ষ্য এবং পরিমাপযোগ্য অর্জনের বার্তা সকলের কাছে পরিষ্কার: ভারতের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা।
দশ বছর আগে (২০১৪): মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকার একটি স্পষ্ট এবং সুচিন্তিত কৌশল গ্রহণ করে যা ভারতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়েছিল। এই কৌশলটি প্রবৃদ্ধির কৌশলের চারটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
শারীরিক, সামাজিক, এবং ডিজিটাল অবকাঠামোতে পাবলিক বিনিয়োগ: পাবলিক বিনিয়োগ ২০১৪ সালে ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৪ সালে ১২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি: ব্যাংকিং, সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে, যার ফলে ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে।
উৎপাদন এবং উদ্ভাবন: "মেক ইন ইন্ডিয়া" এবং "স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া" উদ্যোগগুলির ফলে একটি উজ্জ্বল উৎপাদন এবং উদ্ভাবনী পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
আইন সরলীকরণ: "সর্বনিম্ন সরকার, সর্বাধিক শাসন" নীতি এবং "ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্তি" এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ভারত ১৫০০ এর বেশি প্রাচীন আইন বাতিল করেছে, যার ফলে ৪০ হাজারের বেশি অপ্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন এবং পুরানো আইনগুলি নতুন আইনে প্রতিস্থাপিত হয়েছে যা ভারতে ব্যবসা করা সহজ করেছে।
পশ্চিম ইউরোপের প্রাক্তন উপনিবেশ দেশগুলি যখন তাদের ২০২৪ সালের লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন এটি স্পষ্ট যে তাদের অবশ্যই ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার এই উত্থান থেকে ভালো শিক্ষা নিতে হবে, যা পুরো বিশ্বের সামনে উদ্ভাসিত হচ্ছে।
ব্রিকস জোটে যোগদানকারী অনেক দেশকে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির চারটি স্তম্ভ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
সূত্র: আইওএল
এমএইচএম

