জাতীয় ঐক্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইমাদ ট্রাবেলসির সাম্প্রতিক বক্তব্য লিবিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি স্কুলছাত্রীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন, যা অনেকেই সাংবিধানিক অধিকার এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে মনে করছেন। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের নীরবতাও সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ট্রাবেলসির বক্তব্য: কী ছিল তার প্রস্তাব?
বিজ্ঞাপন
এক সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি চোরাচালানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর, ট্রাবেলসি স্থানীয় উপভাষায় বলেন: ‘আমি শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলব সরকারিভাবে হিজাব চাপানোর সিদ্ধান্ত জারি করার জন্য... স্বাধীনতা? হ্যাঁ, তবে তা আমাদের মূল্যবোধের মূল্যে নয়। আপনি যদি ভিন্নধর্মী স্বাধীনতা চান, ইউরোপে যান।’
এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্টভাবে দেশীয় মূল্যবোধ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তবে এর বিপরীতে স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতার বিষয়টি বিতর্কের জন্ম দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাধ্যতামূলক হিজাব আরোপ লিবিয়ার সাংবিধানিক ঘোষণার সরাসরি লঙ্ঘন। এই ঘোষণায় মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। লিবিয়ার গবেষক আহমেদ আল-তাওয়াতি উল্লেখ করেন যে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ও জাতীয় ঐক্য সরকারের আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই প্রস্তাবকে ‘মৌলিক স্বাধীনতার জন্য হুমকি’ বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটি মনে করে, বাধ্যতামূলক হিজাব মহিলাদের ওপর বৈষম্য চাপিয়ে দেয় এবং তাদের মতপ্রকাশ, ধর্মপালন ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের পরিপন্থী। তারা জাতীয় ঐক্য সরকারকে এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপের পরিবর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর ইস্যুগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ হিজাবকে ‘নৈতিকতার প্রতীক’ বলে সমর্থন করেছেন, আবার অনেকে এটিকে ‘ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন। মোহাম্মদ মাহফুজ নামে একজন লিখেছেন, এই ধরনের জোরপূর্বক আরোপ বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রাবেলসি আরও প্রস্তাব করেছেন যে, নারীদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য পুরুষ অভিভাবকদের অনুমতি নেওয়া উচিত এবং জনসাধারণের স্থান ও কর্মক্ষেত্রে নজরদারি করার জন্য ‘নৈতিক পুলিশ’ গঠন করা দরকার। এই প্রস্তাবগুলোও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ট্রাবেলসির প্রস্তাব ও সরকারের নীরবতা লিবিয়ায় ব্যক্তি স্বাধীনতা, সাংবিধানিক অধিকার ও মূল্যবোধের সংঘাতকে সামনে নিয়ে এসেছে। দেশের বর্তমান ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবু এ নিয়ে বিতর্ক এবং মতবিরোধ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে। [আশ শারকুল আওসাত অবলম্বনে]
লেখক: কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক