নানা জল্পনার পর অবশেষে ভারতে গেছে বাংলাদেশের ইলিশ। দুর্গাপূজা উপলক্ষে অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ইলিশের প্রথম চালান ইতোমধ্যে কলকাতার বাজারে পৌঁছেছে। সেখানকার ক্রেতারা বাংলাদেশের ইলিশ পেয়ে বেজায় খুশি। তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে নিচ্ছেন ইলিশ। যদিও দাম বেশি বলে সবার পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশের প্রথম চালান পৌঁছে। সেই ইলিশ আজ শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের বাজারে উঠতে শুরু করে। কলকাতার হাওড়া,পাতিপুকুর, বারাসাত, শিয়ালদা পাইকারি বাজারে ইলিশের দাম উঠে ১৬০০ থেকে ১৭০০ রুপি। আর এক কেজির নিচের মাছের দাম উঠে ১৪০০ থেকে ১৫০০ রুপি। স্থানীয় খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২ হাজার রুপি। কোথাও আবার আড়াই হাজার রুপি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথম দিনের চালান হিসেবে প্রায় ৫০ মেট্রিক টনের বেশি মাছ এসেছে। যেহেতু প্রথম চালান, স্বাভাবিকভাবেই বাঙালির আবেগের কারণে নিলামে দাম আজ একটু হলেও বেশি। ১০০ মেট্রিক টনের বেশি মাছ এলে দাম হয়ত কিছুটা কম হতো। অনেক মাছ ব্যবসায়ী কিনতে এসেও দামের কারণে না নিতে পেরে ফিরে গিয়েছেন। আমাদের যেহেতু পাইকারি বাজার, তাই অনেক বিক্রেতা মাছ নিয়ে ঠিকই যাবে। কিন্তু ক্ষুদ্রপর্যায়ে তাদের বিক্রি করতে ভালোই বেগ পেতে হবে।
বৃহস্পতিবার বেনাপোল হয়ে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছায় ৫০ টন বাংলাদেশের ইলিশ। সেখান থেকে শুক্রবার সকালে সেসব ইলিশ পৌঁছে যায় হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে।
বিজ্ঞাপন
বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী জানান, এ পর্যন্ত ছয় প্রতিষ্ঠান ১৮ টন ইলিশ ছাড়াতে কাগজপত্র বেনাপোল কাস্টমস হাউজে জমা দিয়েছে। মাছের চালানের কাগজপত্র সঠিক পাওয়ায় আমাদের পক্ষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ৪৯ জন রফতানিকারককে দুই হাজার ৪২০ টন ইলিশ রফতানির ছাড়পত্র দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে ৪৮ জনকে ৫০ টন করে ও একজনকে ২০ টন মাছ রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়। আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত এ অনুমতির মেয়াদ রয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকারের সঙ্গে শুরু থেকেই ভারতের সম্পর্কের কিছুটা শীতলতা অনুভব করা যাচ্ছে। দুই দেশের দায়িত্বশীল পর্যায়ের ব্যক্তিদের বক্তব্যে সেটা আঁচ করা যায়। এর মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এবার দুর্গাপূজায় ভারতে কোনো ইলিশ যাবে না। এমনকি দেশটির ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও তাতে সাড়া দেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে শেষ পর্যন্ত ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার মেট্রিকটন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়ার কথা জানানো হয়।
জেবি