লড়েছেন। হেরেছেন। আবার লড়েছেন। তবু ভোটের লড়াই তাদের থামেনি। ভোটে লড়াই করাই তাদের ‘নেশা’। সেই নিয়ে উপহাসেও কান দেননি। ভারতের বিভিন্ন নির্বাচনে এমন প্রার্থীদের এই তালিকা কিন্তু খুব একটা ছোট নয়।
তামিলনাড়ুর কে পদ্মরাজনের আর এক নাম ‘ভোটের রাজা’। প্রতিদ্বন্দ্বী যিনিই হোন না কেন, তিনি মাথা ঘামাননি। স্থানীয় নির্বাচন থেকে লোকসভা নির্বাচন, কোনওটাই বাদ দেননি তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেও লড়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
১৯৮৮ সাল থেকে পদ্মরাজন ভোটে লড়ছেন। নির্দল প্রার্থী হিসাবে। এখনও পর্যন্ত তিনি মোট ২৩৮টি নির্বাচনে লড়াই করেছেন। এ বছরও লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ধর্মপুরী জেলার লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্দল হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: সেতু ভেঙে ফেলা জাহাজের সব নাবিক ভারতীয়, ব্যঙ্গচিত্র ভাইরাল
মেট্টুরেই সাইকেলের টায়ার সারানোর দোকান রয়েছে পদ্মরাজনের। পাশাপাশি, কারও শরীর খারাপ হলে হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসাও করেন। তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, ভোটজয় নিয়ে মাথা ঘামান না। বারবার ভোটে দাঁড়িয়ে এটাই প্রমাণ করতে চান যে, সাধারণ মানুষও ভোটে অংশ নিতে পারেন।
এখন পর্যন্ত ২০১১ সালে তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচনে পদ্মরাজন উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়েছিলেন। সে বছর ৬,২৭৩টি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। কোনও কেন্দ্রে যত ভোটার রয়েছেন, তাদের ১৬ শতাংশেরও সমর্থন না মিললে প্রার্থীর জমানত বাজেয়াপ্ত হয়। এভাবে পদ্মরাজন লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সত্তরের দশক থেকে যত ভোট হয়েছে, প্রতিটিতেই লড়াই করেছেন তিতার সিংহ। প্রতি বারই হেরেছেন। প্রতি বারই জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে রাজস্থানের বাসিন্দার। তিতারের বয়স ৭৮ বছর। ১০০ দিনের কাজ করে রোজগার করেন। ২০২৩ সালে রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। করণপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। যথারীতি হেরেছেন। তখন পর্যন্ত প্রায় ২০টি ভোটে হেরেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: হোলির আগে ভারতে ঢেকে দেওয়া হলো বহু মসজিদ
তিতার দলিত। কেন বার বার লড়েন ভোটে? তিনি জানিয়েছেন, গরিব, মজুর, ভূমিহীনদের জমির দাবিতে তার লড়াই। তিনি জনপ্রতিনিধি হলে সকলে পাবেন জমি। ২০০৮ সালে রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে ৯৩৮টি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এখন পর্যন্ত ওটাই সর্বাধিক।
নরেন্দ্র মোদি তখনও বারাণসীতে প্রার্থী হননি। তার অনেক আগে থেকেই বারাণসীর মাটিতে আঁকড়ে পড়েছিলেন আর এক নরেন্দ্র। নরেন্দ্র নাথ দুবে। যিনি ‘ধরতি পাকাড়’ নামেই পরিচিত। ১৯৮৪ সাল থেকে সব বিধানসভা, লোকসভা, স্থানীয় নির্বাচনে লড়াই করেছেন দুবে। একটিতেও জেতেননি। জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। দুবে পেশায় আইনজীবী। ২০২২ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তার।
ওড়িশার ব্রহ্মপুরের বাসিন্দা শ্যামবাবু সুবুধি। ১৯৬২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩২টি নির্বাচনে লড়েছেন। প্রতিটিতে হেরেছেন। তবু দমেননি। জানিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার লড়াই চলবেই।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের ১০০টি এশিয়ায়, ভারতেই ৮৩টি
ব্রহ্মপুর আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও। তার বিরুদ্ধেও লড়াই করেছিলেন শ্যামবাবু। ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীর বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটে লড়েছেন। প্রতিবারই হেরেছেন। তবু দমেননি নাগরমল বাজোরিয়া। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে শেষ বার লড়েছিলেন। তখন বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
জীবদ্দশায় প্রায় ৩০০টি নির্বাচনে লড়েছিলেন কাকা যোগিন্দর সিংহ। বরাবর নির্দল হয়েই লড়েছিলেন। জমানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে মৃত্যু হয় তার। কাপড়ের দোকান ছিল যোগিন্দরের। কখনও নিজের হয়ে প্রচার করেননি। ভোটের জন্য টাকাও খরচ করেননি। ১৯৯২ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও লড়েছিলেন তিনি। ১,১৩৫ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন শঙ্করদয়াল শর্মা।
আরও পড়ুন: ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়ার আগে পুরুষদের যৌনাঙ্গ পরীক্ষার প্রস্তাব!
আগরার হাসনু রাম অম্বেডকরি ৯৪টি নির্বাচনে লড়েছিলেন। পঞ্চায়েত, বিধানসভা থেকে লোকসভা। কোনওটিতেই জয়ী হননি। সরকারি চাকরি করতেন। ১৯৮৫ সালে সেই চাকরি ছেড়ে ভোটে লড়াই শুরু করেছিলেন। বিএসপির থেকে টিকিট চেয়েছিলেন। পাননি। সেই থেকে নির্দল হয়েই লড়ে যান।
সূত্র: আনন্দবাজার
একে