সমাজের অনেক সমস্যার মুখে অসহায় বোধ না করে একাই এগিয়ে এলে কত বড় ফল পাওয়া যায়, পাকিস্তানের অটোরিকশা চালক আরাব শাহ তা দেখিয়ে দিচ্ছেন। সেই ‘ভাইজান’ এর কল্যাণে অনেক মেয়ে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।
পেশোয়ার শহরের উপকণ্ঠে পির বালা এলাকায় আরাব শাহ অটো রিকশা চালান। তিনি এলাকার মেয়েদের শিক্ষার লক্ষ্যে নিজের সময় দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি তাদের বিনামূল্যে পরিবহণের ব্যবস্থা করেন। খবর ডয়চে ভেলের
বিজ্ঞাপন
নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে আরাব বলেন, ‘আমি প্রায় নয় বছর ধরে বিনামূল্যে মেয়েদের বাসা থেকে তুলে আবার বাসায় নামিয়ে দেওয়ার পরিষেবা দিয়ে চলেছি। আমার পাঁচ বোন আছে। পরিবহণের অভাবে তারা স্কুলে যেতে পারেনি। অন্য মেয়েরাও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হোক, আমি সেটা চাই না। তাই আমি দুইশোরও বেশি মেয়েদের জন্য এই পরিষেবা দিয়ে আসছি।’
আরও পড়ুন: ভুট্টোর ফাঁসি ন্যায়বিচার ছিল না: পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট
তিনি বলেন, ‘আমার পরিষেবা মেয়েদের উপকার করে আসছে। আমার সহায়তার কারণে তাদের মধ্যে অনেকে কলেজ, হাই স্কুল এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছে। আমার পরিবহণের কল্যাণে এই মেয়েরা শিক্ষার নাগাল পায়। প্রায় সবাই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। বেশিরভাগই যাতায়াতের খরচের কারণে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলো না। আমি তাদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছি এবং বিনামূল্যে পরিবহণের সুবিধা দিয়ে আসছি।’
খবরে বলা হয়েছে, গোটা অঞ্চলে নিরাপদ ও সঠিক পরিবহণের অভাব মেয়েদের শিক্ষার পথে বড় অন্তরায়। পির বালার অনেক মেয়ে জানায়, আরবা শাহের পরিষেবার কারণেই তারা স্কুলে যেতে পেরেছে। যেমন আরজু আহমেদ নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘পরিবহণ নিয়ে আমার সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন ভাইজানের কল্যাণে সমস্যার সমাধান হয়েছে। আমার ভাইয়া খুবই উপকারী। তিনি না থাকলে আমাদের পক্ষে শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না।’
বিজ্ঞাপন
নোশিন খানও আরব শাহের প্রতি কৃতজ্ঞ৷ সে বলে, ‘শিক্ষা আমার কাছে সব কিছু। আমি ডাক্তার হতে চাই। আমি ভাইজানের কাছ গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে শুধু স্কুলে ভর্তি করাননি, প্রতিদিন আমি যাতে নিরাপদে বাসায় ফিরি, সেটাও নিশ্চিত করেছেন। তিনি আমার কাছে আদরের বড় ভাইয়ের মতো।’
আরও পড়ুন: ‘বিয়ে না দিলে স্কুলে যাব না’, ১৩ বছরের বালকের কাছে হার মানল পরিবার!
নিজের কাজ ও আন্তরিকতার দৌলতে আরাব শাহ মেয়েদের পরিবারের আস্থা ও শ্রদ্ধাও অর্জন করেছেন। আরজু আহমেদের বাবা মুহাম্মদ রেহান জানান, ‘আমার তিন মেয়ে। একজন সবে প্রাইমারি স্কুল শেষ করেছে। আরাব শাহের সহায়তায় সে হাই স্কুলে যাচ্ছে। বাকি দুই মেয়ে এখানকার প্রাইমারি স্কুলে পড়ছে। আরাব শাহের ভূমিকা বড় ভাইয়ের মতো। তার কল্যাণেই আমার মেয়েরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনেক সাহায্য পাচ্ছে।’
পির বালায় এই কাজের জন্য শাহ অনেক সম্মান ও স্বীকৃতি পাচ্ছেন। নিজের স্বপ্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। গোটা পাকিস্তানে পরিবহণ নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ করা আমার লক্ষ্য। সব বঞ্চিত শিক্ষার্থীর কাছে সেই পরিষেবা যেন পৌঁছে যায়।’
একে