মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ইসরায়েলের অস্ত্রেই ইসরায়েলকে ঘায়েল করছে হামাস!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:০২ এএম

শেয়ার করুন:

বাইডেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সংশোধন চায় হামাস
ফাইল ছবি

প্রায় চার মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ চলছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হামাস যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তার উল্লেখযোগ্য একটা অংশের উৎস ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হামাসের ব্যবহার করা অস্ত্রগুলোর অন্যতম উৎস ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।


বিজ্ঞাপন


গত ৭ অক্টোবর কয়েক দশকের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বিধ্বংসী হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামলায় কয়েক হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, বিস্ফোরক, ছোট ও হালকা অস্ত্র এবং প্রচুর পরিমাণ গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে হামাস।

আরও পড়ুন

গাজায় নিহত ২৬২৫৭, ভেঙে পড়তে পারে নাগরিক শৃঙ্খলা

প্রায় ১৭ বছর ধরে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা গাজা। এছাড়া আকাশ ও নৌপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। তা সত্ত্বেও হামাসের হামলায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের ব্যবহারে কীভাবে হলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিজেদের বুদ্ধিমত্তা, কৌশল ও উপকারী বিদেশি বন্ধুর সহায়তায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞরা মত দেন।

এছাড়া অনেক সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অবরোধের মধ্যেও হামাসের কাছে এত ভারী অস্ত্র থাকার কারণ হলো, গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে তৈরি করা পথে চোরাচালানের মাধ্যমে এসব অস্ত্র তাদের হাতে আসে।


বিজ্ঞাপন


israrel_gaza_
গাজায় অভিযানে ইসরায়েলি সেনারা। পুরোনো ছবি।

কিন্তু ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দাদের সাম্প্রতিক দেওয়া তথ্যে উঠে এসেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে হামাসের ব্যবহার করা অস্ত্রের অন্যতম উৎস ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় দখলদার দেশটির ফেলা অবিস্ফোরিত হাজার হাজার গোলাবারুদ দিয়ে নিজেদের জন্য রকেট ও ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা তৈরি হয়েছে হামাসের। এছাড়া ৭ অক্টোবর হামলার সময় ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি থেকে লুট করা অস্ত্রও হামাস তাদের যোদ্ধাদের হাতে তুলে দিচ্ছে।

গত কয়েক মাসের লড়াইয়ের সময়ে সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে, হামাসের সম্পর্কে ৭ অক্টোবরের আগে যা মূল্যায়ন করা হয়েছে তা ভুল। তেমনি তাদের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টিকেও ছোট করে দেখেছে ইসরায়েল।

আরও পড়ুন

একসঙ্গে হামাসকে ধ্বংস ও জিম্মিদের উদ্ধার অসম্ভব: ইসরায়েলি কমান্ডার

বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বিগত ১৭ বছরের গাজা অবরোধকালে সেখানে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এখন সেগুলোই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেদিন হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢোকার কয়েক ঘণ্টা পর রেইম সামরিক ঘাঁটির বাইরে সশস্ত্র এক হামাস যোদ্ধার মরদেহ দেখতে পান ইসরায়েলি সেনারা। তার শরীরে একটি গ্রেনেড বাঁধা ছিল। ইসরায়েলি সেনাদের একজন বলেন, ‘গ্রেনেডে হিব্রু ভাষায় লেখাগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।’তিনি চিনতে পারেন, সেটি ইসরায়েলের তৈরি নতুন মডেলের বুলেটপ্রুফ গ্রেনেড।

gaza_israel_20
ভয়াবহ হয়ে উঠেছে গাজার পরিস্থিতি।

ঘটনার দিন ইসরাইলে পাঁচ হাজারের মতো রকেট ছুঁড়েছিল হামাস। ওই সামরিক ঘাঁটির কয়েক মাইল দূর থেকে একটি রকেট উদ্ধার করে ইসরায়েলের একটি ফরেনসিক দল। ইসরায়েলের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ফরেনসিক দল পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখে, রকেটে যে বিস্ফোরক ছিল, সে ধরনের বিস্ফোরকের ব্যবহার শুধু সামরিক বাহিনীতেই দেখা যায়। যেটি খুব সম্ভবত এর আগের গাজা যুদ্ধে ছোড়া অবিস্ফোরিত ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

ইসরায়েলি পুলিশের বোমা নিষ্ক্রীয়করণ বিভাগের সাবেক উপপ্রধান মিখাইল কারদাশ বলেছেন, হামাসের হাতে থাকা বিস্ফোরকের প্রধান উৎস হলো অবিস্ফোরিত সমরাস্ত্র। তারা ইসরায়েলের ছোড়া বোমা ও কামানের গোলা কাটছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব তারা বিস্ফোরক ও রকেট তৈরির ক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে।

আরও পড়ুন

গাজায় এক হামলায় নিহত ২৪ সেনা, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরায়েলের

জানা গেছে, গাজায় বহু বছর ধরে বিক্ষিপ্তভাবে বোমা হামলা ও সাম্প্রতিক বোমাবর্ষণের পর সেখানে হাজার হাজার টন অবিস্ফোরিত সমরাস্ত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যেগুলো পুনরায় ব্যবহারযোগ্য। অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, অবিস্ফোরিত ৭৫০ পাউন্ডের একটি বোমা থেকে কয়েকশ’ ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট বানানো সম্ভব।

বিস্ফোরক নিয়ে কাজ করে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন মাইন অ্যাকশন সার্ভিস। গাজায় সংস্থাটির প্রধান চার্লস বার্চ বলেন, যুদ্ধের পর গাজায় কামান, হাতবোমা ও অন্য হাজার হাজার অবিস্ফোরিত সমরাস্ত্র পড়ে থাকবে। এগুলো হামাসকে উপহার দিয়ে যাওয়ার মতো একটি বিষয় হবে।

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর