রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

করোনার পর চীনে কেন শিশুদের নিউমোনিয়া বাড়ছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

করোনার পর চীনে কেন শিশুদের নিউমোনিয়া বাড়ছে?
চীনের উত্তরাঞ্চলের শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: বিবিসি, গেটি ইমেজেস

করোনার পর চীনের শিশুদের মধ্যে বাড়ছে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ। এটা এখন চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর চারেক আগে এ দেশটি থেকে শুরু হওয়া কোভিড সংক্রমণের ঘটনা ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর লাখ লাখ মানুষ করোনা আকান্ত হয়ে মারা যান।

এসব কারণে, চীনের উত্তরাঞ্চলের শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।


বিজ্ঞাপন


সম্প্রতি চীনের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিপুল সংখ্যক অসুস্থ শিশু চিকিৎসার জন্য এসেছে বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: মিয়ানমার সীমান্তের কাছে চীনের সামরিক মহড়া

শিশুদের মধ্যে এই শ্বাসকষ্টজনিত রোগের কারণ হিসেবে চীনে কোভিড-সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া ও শীতের মওসুম- এই দু’টি বিষয় উঠে এসেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চীনে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থদের সংখ্যা কোভিডের মতো মারাত্মক নয় এবং সাম্প্রতিক ক্ষেত্রে কোনো 'নতুন বা অস্বাভাবিক' রোগজীবাণুও পাওয়া যায়নি।


বিজ্ঞাপন


উদ্বেগ বাড়িয়েছে

কোভিড-বিধি পালনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরে বেইজিং-এ শিশুদের ফ্লু-জাতীয় রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ২২ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে চীনের কাছে এ বিষয়ে আরও তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেশটিতে মাস্ক পড়া এবং টিকা নেওয়ার বিষয়ে জোর দিতে বলেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে আরও তথ্য চেয়ে পাঠনোর পর, চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (এনএইচসি) কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সিনহুয়ার নিবন্ধে বলা হয়েছে, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের রোগ নির্ধারণ ও যত্নের দিকে গভীর মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।

22903c00-8f69-11ee-952c-5f8
চীনে উত্তরাঞ্চলে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা ব্যাপক।

পরে ২৩ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, চীন কোনো 'অস্বাভাবিক বা নতুন রোগজীবাণু' শনাক্ত করতে পারেনি এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা 'একাধিক রোগ-জীবাণুর' কারণে হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গত তিন বছরের তুলনায় অক্টোবর থেকে চীনের উত্তরাঞ্চলে 'ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগ বেড়েছে'।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং চীনের জাতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মারিয়া ভ্যান করখভ বলেছেন, চীনে দুই বছরের কোভিড-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে শিশুরা এই ধরনের রোগজীবাণু থেকে দূরে ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক অবস্থাকে আমরা প্রাক-মহামারি পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করতে বলেছি এবং এখন যে ঢেউ দেখা যাচ্ছে তা ২০১৮-১৯ সালের মতো ব্যাপক নয়।”

রোববার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের মুখপাত্র মি ফেং জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণুর কারণে, যার মধ্যে প্রধান হলো ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণুর উপস্থিতি ।

এই রোগ কি সংক্রামক?

চিকিৎসকদের মতে, এটি একটি সংক্রামক রোগ। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, শ্বাসযন্ত্র-সংক্রান্ত রোগগুলো সংক্রামক। কাশি, হাঁচি ও কথা বলার মাধ্যমে এই রোগের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতের লক্ষ্ণৌয়ের কিং জর্জ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পালমোনারি এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের প্রধান বেদ প্রকাশ বলছেন, কোভিডের সময় বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার পর চীনে এটাই প্রথম শীত, তাই সেখানকার মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকবে।

একইসঙ্গে তিনি বলছেন, চীনে নতুন কোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াল প্যাথোজেন পাওয়া যায়নি।

মাইকোপ্লাজমা, এএসভি কী?

চিকিৎসকদের মতে, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সবই মাইক্রোস্কোপিক প্যাথোজেন বা প্যাথোজেন যা থেকে এই জাতীয় রোগ ছড়ায়।

চিকিৎসক বেদ প্রকাশ ব্যাখ্যা করেছেন যে মাইকোপ্লাজমা একটি ব্যাকটিরিয়াল জীবাণু এবং এটি বেশিরভাগ শিশুদের আক্রমণ করে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এটি গলা এবং শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করে, যা থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে। রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস বা আরএসভি এক ধরনের ভাইরাস।

fb0b6180-8f65-11ee-833d-0f8
চীনের একটি শিশুহাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা আক্রান্ত বাচ্চারা এবং সঙ্গে তাদের অভিভাবকেরা

দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস-এর পালমোনারি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিনের প্রধান অনন্ত মোহনের মতে, এই ভাইরাসটি ‘আপার রেসপিরাটরি’, নাক এবং গলাকে প্রভাবিত করে। এটি সর্দি, কাশি এবং জ্বরেরও কারণ।

মাইকোপ্লাজমা এএসভি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা খুব সাধারণ রোগ, যা খুব গুরুতর না হলে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সেরেও যায়।

এর লক্ষণগুলো কী ?

চিকিৎসকদের মতে এর বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যা আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ বলেই মনে হয়,

যেমন- গলা ব্যথা, কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর।

চিকিৎসকদের মতে, এটি কখনো কখনো আপনা আপনিই ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় অ্যালার্জির ওষুধও দেওয়া হয়, কিন্তু নিউমোনিয়ার রূপ নিলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।

সতর্ক রয়েছে ভারত

চীন ভারতের প্রতিবেশী দেশ। এই অবস্থায় ভারত সরকারও এই রোগ প্রতিরোধে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি শ্বাসযন্ত্রের রোগ মোকাবেলার উপায় এবং তার জন্য প্রস্তুতির বিষয়ে একটি বিশদ বৈঠক করেছে।

প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য সচিব সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে এবং জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতালগুলোকে এই বিষয়ে প্রস্তুতি ও পর্যালোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ফ্লু-র ওষুধ ও ভ্যাকসিন, মেডিকেল অক্সিজেন, অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, টেস্টিং কিট, অক্সিজেন প্ল্যান্ট, ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকতে হবে।

একই সঙ্গে সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে 'কোভিড-১৯-এ সংশোধিত নজরদারি কৌশল' সংক্রান্ত নির্দেশিকা বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: করোনার পর এবার চীনে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ, উদ্বিগ্ন ভারত

ওই নির্দেশিকা এই বছরের শুরুতে জারি করা হয়েছিল যাতে ইনফ্লুয়েঞ্জা-লাইক ইলনেস (আইএলআই) বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় অসুস্থতা এবং সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফকশন্স (এসএআরআই) বা শ্বাসযন্ত্রের গভীর অসুস্থতা পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস-এর (এআইআইএমএস) পালমোনারি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিনের প্রধান ড. অনন্ত মোহন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীন থেকে যে সব তথ্য পেয়েছে, তাতে বোঝা যায় যে কাশি ও সর্দি-কাশিতে থাকা সাধারণ জীবাণুগুলো সেখানে রয়েছে।

তিনি বলেন, “এই ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং এর অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে, তবে এটি কোনো নতুন জীবাণু নয়।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর