বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

নিজের আইনজীবীকে দলের চেয়ারম্যান বানালেন ইমরান খান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

নিজের আইনজীবীকে দলের চেয়ারম্যান বানাচ্ছেন ইমরান খান
ছবি: ডেইলি পাকিস্তান

পাকিস্তানের বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান পদে নিজের আইনজীবী ব্যারিস্টার গহর আলী খানকে মনোনীত করেছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সম্প্রতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেয়া বা দলীয় প্রধানের পদে থাকার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় ইমরান খানকে। ফলে পিটিআই চেয়ারম্যানের পদে তিনি আর থাকতে পারছেন না।

পাকিস্তানের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের আদেশ অনুযায়ী, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দলের নতুন চেয়ারম্যান নির্ধারণ করতে হবে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই নেতা সিনেটর আলি জাফর জানিয়েছেন, দলের চেয়ারম্যান নির্বাচনে ইমরান খান অংশ নেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসাবে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার গহর আলী খানকে মনোনীত করেছেন। খবর বিবিসির


বিজ্ঞাপন


ইমরান খানের ওপর থেকে ‘অযোগ্য আদেশ’ আদালত তুলে নিলে তিনি আবার চেয়ারম্যান পদে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন জাফর। পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, তোশাখানা কেস বা উপহার হিসাবে পাওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় ইমরান খান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না বা দলীয় পদে থাকতে পারবেন না।

আরও পড়ুন: ইমরান খানের জন্য স্বস্তি আনল আদালত

ইমরান খানের আইনজীবী শের আফজাল মারওয়াত মঙ্গলবার বলেছিলেন, আদালত তাকে আবার যোগ্য বলে ঘোষণা করলে তিনি আবার চেয়ারম্যানের পদে ফিরে যাবেন। আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সাথে তিনি দেখা করেছেন। সেখানে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে দলের নেতৃত্বের বিষয়টিও ছিল।

পিটিআই নেতা সিনেটর আলি জাফর বলেছেন, চেয়ারম্যান হিসাবে না থাকলেও দলের প্রধান নেতা হিসাবেই থাকবেন ইমরান খান। তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসাবে এমন একজনকে চাইছিলেন ইমরান খান, দলে যার স্থায়ী পদ নেই। দলের স্থায়ী চেয়ারম্যান ও নেতা হিসাবে ইমরান খানই থাকবেন।'


বিজ্ঞাপন


সিনেটর আলি জাফর বলেন, 'তাকে ছাড়া পিটিআই কিছুই নয়। পিটিআই হচ্ছে ইমরান খান এবং ইমরান খান হচ্ছেন পিটিআই। কৌশলগত কারণে এটা করা হচ্ছে। আমরা এই কৌশল নিয়েছি, এটা আমাদের প্ল্যান-বি। বহুদিন ধরেই আমরা এজন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।'

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রই কী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে?

এই ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার গহর আলী বলেছেন, 'ইমরান খানকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই। আমি ইমরান খান যতদিন পুনরায় ফেরত না আসবেন, ততদিন তার মনোনীত প্রতিনিধি এবং উত্তরসূরি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে। পিটিআইয়ের আদর্শ এবং সংগ্রাম একই থাকবে।'

তবে ইমরান খান মনোনীত করলেও আগামী ২ ডিসেম্বর পিটিআইয়ের দলীয় সম্মেলনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হলেই চেয়ারম্যান পদ নিশ্চিত হবে ব্যারিস্টার গহর আলীর। তবে ওই নির্বাচনে ইমরান খানের মনোনয়নের বাইরে কারও নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলা চলে।

ইমরান খানকে কেন্দ্র করেই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই গড়ে উঠেছে। তিনিই এই পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনকি, ব্যালট পেপারে এই দলের যে লোগো ছাপা হয় তাতেও ক্রিকেট ব্যাটের ছবি রয়েছে, যা ইমরান খানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের কথাই তুলে ধরে।

তোশাখানা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় ইমরান খানকে দলের চেয়ারম্যান হিসাবে অযোগ্য ঘোষণা করে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী ২০ দিনের মধ্যে দলের নতুন নেতা নির্বাচন করার জন্যও কমিশন আদেশ দিয়েছে। ওই আদেশ প্রতিপালনের জন্য আর ১৩দিন সময় রয়েছে।

আরও পড়ুন: ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কী?

এর আগে আগাস্ট মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকারি পদে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এ সময়কালে তিনি আর নির্বাচন করতে পারবেন না।

দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানের তিন বছর কারাদণ্ড হওয়ার তিনদিন পর দেশটির নির্বাচন কমিশন এ ঘোষণা দেয়। ইমরান খান অবশ্য বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন। তবে পাকিস্তান সরকার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে পাকিস্তানের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি হবে ইসলামাবাদের কাছে আদিয়ালা কারাগারে, যে কারাগারে ইমরান খানকে রাখা হয়েছে। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ৭০ বছর বয়সী ইমরান খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু গত বছর দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার পর সংসদে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান।

তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল, বিদেশিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপহারের তথ্য সঠিকভাবে না জানানো এবং রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করে অর্জিত অর্থ তোষাখানায় জমা না দেওয়া। এসব উপহারের আনুমানিক মূল্য এক কোটি ৪০ লাখ পাকিস্তানি রুপি, যা ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ।

পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী কোন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। ইমরান খানের আইনজীবীরা তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দেয়া রায়কে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এখন সেই শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: বিদেশে কিছু নেই, যাওয়ারও দরকার নেই: ইমরান খান

গত বছরের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান আগাম নির্বাচনের দাবি তুলে আন্দোলন করে আসছিলেন। তিনি সরকার এবং পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রাখেন এবং তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেন।

গত বছরের নভেম্বরে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নেয়ার সময় ইমরান খানের প্রাণনাশের চেষ্টার সময় তার পায়ে গুলি লাগে, সেই ঘটনার জন্যও তিনি উচ্চপদস্থ সরকারি এবং সেনা কর্মকর্তাদের দায়ী করেন।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাকিস্তানে বিরোধী রাজনীতিকদের প্রায়শই এ ধরনের মামলার মুখে পড়তে হয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, সেদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে।

গত মার্চে তাকে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। যদিও সুপ্রিম কোর্ট পরে তার গ্রেফতারকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। তখন তার গ্রেফতারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে সহিংস বিক্ষোভে অন্তত ১০ জন নিহত হয়।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর