ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের সম্মতিতে যুদ্ধবিরতি চলছে। চারদিনের যুদ্ধবিরতির আজ রোববার তৃতীয় দিন। শনিবার হামাস তাদের হাতে বন্দী আরও ২০ জনকে মুক্তি দিয়েছে। অপরদিকে ইসরায়েল মুক্তি দিয়েছে আরও ৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে। মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়তে পারে।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে চুক্তি অনুযায়ী ২০ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এদের মধ্যে ১৩ জন ইসরাইলি ও ৭ জন বিদেশি নাগরিক। হামাসের সশস্ত্র শাখা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। খবর আল জাজিরার
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৫ নভেম্বর) দেশটির স্থানীয় সময় রাত ১১ টার দিকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, তারা ১৩ ইসরায়েলি বন্দী এবং সাতজন বিদেশি নাগরিককে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে।
আরও পড়ুন: কাউকে আঘাত করেনি হামাস, মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলিরা সবাই সুস্থ
এছাড়াও বন্দীদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কাতারি মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘১৩ ইসরায়েলি ও বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিক এখন গাজায় ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রসের (আইসিআরসি) সঙ্গে রয়েছেন।’
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, ‘রেডক্রস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জিম্মিরা বর্তমানে রাফাহ ক্রসিং থেকে মিশরের দিকে যাচ্ছে।’
হামাসের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা নিয়ে অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক এক্স পোস্টে লিখেছেন, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রসের কাছে ১৩ জন ইসরায়েলি ও চারজন বিদেশি নাগরিককে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিরা নিরাপত্তা না পেলে ইসরায়েলও নিরাপদ হবে না: ডেভিড ক্যামেরন
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, তারা ১৩ ইসরায়েলি বন্দী এবং সাতজন বিদেশি নাগরিককে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে।
যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী কারাগারে বন্দী আরও ৩৯ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি কারাগার কর্তৃপক্ষ। শনিবার ( ২৫ নভেম্বর) দেশটির স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ১টার দিকে তাদের মুক্তি দেয়া হয়। এর দুই ঘণ্টা আগে ২০ জনকে মুক্তি দেয় হামাস।
বাড়তে পারে মেয়াদ
গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা করতে ইসরায়েল সফরে গেছেন কাতারের প্রতিনিধি দল। যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিন শনিবার তারা ইসরায়েল সফরে যান।
ইসরায়েল সফরে থাকা এক কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কাতারি অপারেশন টিম ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে সমন্বয় করছেন।’
যুদ্ধবিরতি বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মিশর। দেশটি বলছে, চলমান চারদিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও একদিন বা দুইদিন বাড়ার সম্ভাবনার ব্যাপারে ‘ইতিবাচক সংকেত’ পাওয়া গেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর ‘বাস্তবসম্মত সুযোগ’ রয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজায় নেতানিয়াহুর ‘চরম পরাজয়’!
যুদ্ধবিরতি কার্যকর নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আজ সকালে কয়েক দিন মেয়াদি এ চুক্তি কার্যকর হওয়ার সময়ে আমি আমার দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এ তো কেবলই শুরু। তবে এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, তা ভালোভাবেই হয়েছে।’
যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আর কতদিন বাড়তে পারে- এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না ঠিক কতদিন তা বাড়তে পারে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আরব বিশ্ব যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, এই যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ হ্রাস করতে যেভাবে বিভিন্ন দিক থেকে চাপ প্রয়োগ করছে, তাতে আশা করা যায় যে শিগগিরই সেখানে যাবতীয় সংঘাতের অবসান আমরা ঘটাতে পারব।’
শর্তভঙ্গ ইসরায়েলের
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে চার দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া এই যুদ্ধবিরতির মধ্যদিয়ে গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী প্রথমদিন স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় ১৩ জন ইসরায়েলি ও ১২ জন থাই নাগরিককে মুক্তি দেয় হামাস। এর আড়াই ঘণ্টা পর কারাগার থেকে ৩৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল।
তবে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে এসে বন্দীদের মুক্তি দিতে বিলম্ব করেছে হামাস। হামাসের অভিযোগ, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি শর্ত ভঙ্গ করেছে, যার কারণে তারাও বন্দিদের মুক্তি দিতে দেরি করছে।
শনিবার লেবাননের বেইরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান বলেন, ‘ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত পূরণ করছে না।’ তিনি আরও বলেন, শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৩৪০ টি ত্রাণবাহী ট্রাক পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৬৫টি উত্তর গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে।
আরও পড়ুন: গাজার পাশে দাঁড়ানো ‘পবিত্র দায়িত্ব’: পুতিন
সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইসরায়েল মানবিক যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়ার কথা থাকলেও ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে। যার ফলে আমরা ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্ত করতে দেরি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উত্তর গাজায় ১০০ টি ট্রাক প্রবেশের কথা থাকলেও ইসরায়েল মাত্র ৩টি ট্রাক ঢুকতে দিয়েছে। এছাড়াও দক্ষিণ গাজায় ড্রোন উড়িয়েও ইসরায়েল মানবিক যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে।’
হামাসের ওই সিনিয়র কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির তালিকায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে ইসরায়েল। গাজার বেইত হানুনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দুইজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছেন। যদিও, ওই এলাকায় ফিলিস্তিনিদের চলাচলের অনুমতি ছিল।’
তবে, হামাসের যুদ্ধবিরতি শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন: ফুটবলার হতে চেয়েছিল আসিফ, পা কেড়ে নিল ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের গত ৭ অক্টোবরের আকস্মিক হামলায় ১৪০০ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় ইসরায়েল। তবে সম্প্রতি সেই সংখ্যা কমিয়ে ১২০০ করা হয়েছে। এছাড়া হামাস ইসরায়েল থেকে ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গেছে বলে জানায় নেতানিয়াহু প্রশাসন।
এরপর থেকে গাজায় ও পশ্চিম তীরে নির্বিচারে হামলা করছে ইসরায়েল। গাজার আবাসিক এলাকা, স্কুল, হাসপাতাল, জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার গুদাম, খাবারের দোকানসহ কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যায়নি। এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬০০টিরও বেশি শিশু। নিহত বাকিদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী।
একে