ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা তাদের মাতৃভূমি পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত লড়বে। হামাসের শীর্ষ নেতা ও পলিটব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়া এ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণ হামাসের দেওয়া শর্ত মেনে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে বাধ্য করেছে।
শুক্রবার হানিয়া বলেন, দখলদার ইসরায়েল গণহত্যা ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তাদের বন্দীদের মুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছিল ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা তা ব্যর্থ করে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের মালিকানাধীন জাহাজে ইরানি ড্রোন হামলা
তিনি বলেন, “ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বাজি ধরেছিল যে বন্দুকের জোরে হত্যা ও গণহত্যা চালিয়ে তাদের বন্দীদের মুক্ত করতে পারবে। কিন্তু প্রায় ৫০ দিন পর তারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের শর্ত মেনে তাদের বন্দীদের মুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে।”
চলমান চার দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবার দখলদার সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য হামাস পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান হানিয়া। তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, গাজা উপত্যকায় নিজের অবস্থান থেকে একচুলও নড়বে না হামাস এবং যুদ্ধ শেষ হলে এই উপত্যকার ভবিষ্যত নির্ধারণের ব্যাপারে কোনো বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না তারা।
হামাসের শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ইসরায়েল যতক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি মেনে চলবে - ততক্ষণ প্রতিরোধ যোদ্ধারাও চুক্তির প্রতি অবিচল থাকবে। গাজা উপত্যকা ও অধিকৃত ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিরা গত সাত সপ্তাহ ধরে যে ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে তার জন্য হানিয়া তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি অর্জনে মধ্যস্থতা করার জন্য কাতার এবং মিসরকেও ধন্যবাদ জানান।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া গাজা উপত্যকার ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পাশবিক হামলার সময় ফিলিস্তিনি জনগণ ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পাশে থাকার জন্য ইরানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন হানিয়া। তিনি গাজাবাসীর সমর্থনে লড়াই করার জন্য লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান। তার মতে, গাজায় বর্তমানে চলমান যুদ্ধবিরতি হামাসের ‘রাজনৈতিক ও সামরিক’ বিজয়।
কাতারের রাজধানী দোহায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে এক বৈঠকে এ মন্তব্য করেন ইসমাইল হানিয়া। তিনি বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা, প্রেসিডেন্ট, সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি ‘অকুণ্ঠ সমর্থন’ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে।
আরও পড়ুন: আজ আরও ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পাবেন
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে হামাস নেতা গাজার জনগণের ওপর ইসরায়েলি পাশবিকতার বিবরণ দিয়ে বলেন, দখলদার সেনারা বোমাবর্ষণ করার ক্ষেত্রে গাজার আবাসিক ঘর-বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ, গির্জা- কোনোটিই বাদ রাখেনি। যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে প্রথমদিকে আমেরিকা ও ইসরায়েলের বিরোধিতার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যুদ্ধের সাত সপ্তাহের মাথায় এসে শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের কাছে মস্তক অবনত করে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে তেল আবিব ও ওয়াশিংটন।
হামাসের পলিটব্যুরো প্রধান গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতিকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ইসরায়েলিরা গাজায় হামলা চালিয়ে নিরপরাধ নারী ও শিশুদের হত্যা করা ছাড়া অন্য কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
সাক্ষাতে গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণ ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিজয়ে হামাস নেতাকে অভিনন্দন জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আল-আকসা তুফান অভিযানের ফলাফল বিশ্ববাসীকে হতভম্ব করে দিয়েছে। আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, গাজা উপত্যকার জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি অনেক বেশি, তিক্ত ও দুর্ভাগ্যজনক হলেও এ যুদ্ধে ফিলিস্তিনি জাতি যে বিজয় অর্জন করেছে তার ব্যাপকতা আরও অনেক বেশি। এই বিজয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা ও ইসরায়েল যৌথভাবে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চরম আগ্রাসন ও পাশবিকতা চালিয়েও গাজা উপত্যকায় তাদের কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তারা তাদের বন্দীদের ছাড়িয়ে নিতে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছে।
সূত্র : প্রেস টিভি
এমইউ