ভারতের উত্তরাখণ্ডে নির্মাণাধীন টানেল ধসের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্ধার হয়নি সেখানে আটকেপড়া ৪১ শ্রমিক। এতদিন পাইপের মাধ্যমে শুকনো খাবার পাঠানো হলেও সোমবার নতুন একটি পাইপের মাধ্যমে গরম খিচুড়ি পাঠানো হয়েছে তাদের কাছে। ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তাদের ছবি।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এছাড়া খাদ্য, পানীয় ও অক্সিজেন পৌঁছে দিতে এবং উদ্ধারকাজ সহজ করতে বিভিন্ন দিক দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতদিন ধরে নির্মাণাধীন টানেলে আটকেপড়া শ্রমিকদের পাইপের মাধ্যমে শুকনো খাবার পাঠানো হলেও সোমবার নতুন একটি পাইপের মাধ্যমে রান্না করা খাবার পাঠানো হয়েছে।
ওই ৪১ শ্রমিকের জন্য খাবার প্রস্তুতকারক হেমান্ত নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘শ্রমিকদের কাছে এবারই প্রথম গরম খাবার যাচ্ছে। আমরা তাদের কাছে বোতলে ভরে খিচুড়ি পাঠাচ্ছি। আমাদেরকে যেসব খাবার রান্না করতে বলা হয়েছে আমরা সেসবই পাঠাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: ভারতের বন্দরে ভয়াবহ আগুন
এছাড়াও, শ্রমিকদের মনোবল দৃঢ় রাখতে তাদের সঙ্গে ওয়াকিটকিতে কথা বলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কথা বলছেন শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোন করে বলেছেন, শ্রমিকদের সাহস যোগাতে, মনোবল অটুট রাখার ব্যবস্থা করতে।
বিজ্ঞাপন
বহু চেষ্টার পর ১০ দিনে প্রথম তাঁদের ছবি পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার পাহাড় ড্রিল করে ছয় ইঞ্চি ব্যাসের একটি পাইপ শ্রমিকদের সামনে পর্যন্ত ঢোকানো সম্ভব হয়। সেটার ভেতর দিয়েই পাঠানো হয়েছিল ক্যামেরা।
১২ নভেম্বর সকালে ব্রহ্মখাল-য়ামুনোত্রী মহাসড়কে নির্মাণাধীন টানেলে এই ধসের ঘটনা ঘটে। তারপর থেকেই শ্রমিকদের উদ্ধারে ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু এখনো তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ৪১ জন শ্রমিকের আতঙ্কিত চেহারা। তারা এখনো জীবিত আছেন।
উদ্ধারকাজের দায়িত্বে থাকা কর্নেল দীপক পাতিল বলেন, রোববার রাতের অগ্রগতিতে আমরা খুশি। আমরা শ্রমিকদের কাছে মোবাইল ফোন ও চার্জারও পাঠাব। আশা করা যায়, এরপর উদ্ধারকাজ আরও দ্রুত করা সম্ভব হবে।’
টানেল ধসে আটকা ৪০ শ্রমিক, সুড়ঙ্গ খুঁড়ে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা টানেল ধসে আটকা ৪০ শ্রমিক, সুড়ঙ্গ খুঁড়ে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা
গত সোমবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, পাঁচটি সংস্থা যৌথভাবে উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছে। আনা হয়েছে একাধিক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। তার সাহায্যেই নতুন করে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। এর আগে, ড্রিল করে সুড়ঙ্গের খুব কাছ পর্যন্ত পৌঁছানোর পর বিরাট ধস নামে, সব কাজ পণ্ড হয়ে যায়। এখন বিভিন্ন দিক থেকে ড্রিল করে বড় বড় পাইপ ঢুকিয়ে সুড়ঙ্গের ভিতর পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে হালাল ট্যাগযুক্ত পণ্য নিষিদ্ধ
চারধাম যাত্রার রাস্তা চওড়া করার জন্য উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর কাছে পাহাড় কেটে টানেল তৈরির কাজ চলছিল। চারধাম অর্থাৎ, কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী এবং য়ামুনোত্রী। এই সরকারের অন্যতম প্রকল্প এই রাস্তা। কিন্তু শুরু থেকেই এই রাস্তা নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদেরা। যেভাবে হিমালয় কাটা হচ্ছে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন পরিবেশবিদ দীপায়ন দে এবং বিভাংশু কাপারওয়ান। সুড়ঙ্গে ধস নামার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন তারা।
ধসের পর তারা দুজনই ডয়চে ভেলেকে জানান, শ্রমিকদের উদ্ধার করার পর এই প্রকল্পটি নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত সরকারের।
একে