আল শিফা হাসপাতাল থেকে অপরিণত শিশুরা দক্ষিণ গাজায় পৌঁছেছে। রোববার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের তাল আলসুলতান হাসপাতালে ৩১টি অপরিণত শিশু এসেছে।
তারা আরও জানিয়েছে, আগামীকাল শিশুদেরকে তাদের পরিবারের সঙ্গে মিসরীয় হাসপাতালে পাঠানো হবে।
বিজ্ঞাপন
আল-জাজিরা বলেছে, আল-শিফা হাসপাতালের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের এবং ৩১ অপরিণত শিশুকে দক্ষিণ গাজায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি জাহাজে হামলার হুমকি হুথিদের
বুধবার ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের পর আল-শিফা হাসপাতালে জ্বালানি ও চিকিৎসা সরবরাহের অভাবের সময় ইনকিউবেটর ছাড়া থাকা ৩৯ শিশুর মধ্যে ৩১টি শিশুকে বের করে এনে রাফাহ শহরের তাল আলসুলতান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গাজার হাসপাতাল বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাকাউত সাংবাদিকদের বলেছেন, আল-শিফা হাসপাতালের ৩১ অপরিণত শিশুকে তিনজন ডাক্তার এবং দুই নার্স-সহ দক্ষিণ গাজায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের মিসরীয় হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গাজা শহরের প্রধান হাসপাতাল আল-শিফা ছেড়ে শনিবার শত শত মানুষ চলে গেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন রোগীও আছেন।
সেখানকার কয়েকজন মেডিকেল কর্মকর্তা বলেছেন যে তাদের চলে যেতে বলেছে ইসরায়েল। এ সময় গোলাগুলির মধ্যে অনেক মানুষকে ধ্বংসস্তূপের মধ্যেকার পথ দিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, উত্তর গাজার জাবালিয়ায় দু’টি বিস্ফোরণে একসঙ্গে ৮০ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল সেখানে হামলা করেছে।
বিবিসি জাবালিয়ার আল-ফাখৌরা স্কুলের জিওলোকেটেড ফুটেজ ভেরিফাই করে দেখেছে যে স্কুলটিতে নারী ও শিশুসহ অনেক মানুষ গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছে।
ভবনের বিভিন্ন অংশে মানুষকে মেঝেতে নিশ্চল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ফুটেজে এমন ২০টিরও বেশি হতাহতের ঘটনা দেখা গেছে এবং এর মধ্যে প্রায় অর্ধেককে নিচতলায় একটি নির্দিষ্ট ঘরে দেখা যায়।
এমনটা দেখে ধারণা করা যায়, ওই আশ্রয়কেন্দ্রটি যথেষ্ট ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, তিনি তার এজেন্সির একটি স্কুলে অসংখ্য মানুষ হতাহত হওয়ার ভয়ঙ্কর ছবি এবং ফুটেজ দেখেছেন। ওই স্কুলটিতে "হাজার হাজার বাস্তুচ্যুতকে আশ্রয় দেওয়া" হয়েছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যে জাবালিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ৩০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘গাজার যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে তার দায় আমেরিকার’
ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও দুই হাজারের বেশি মানুষ চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে জাতিসংঘের একটি যৌথ দল আল-শিফা হাসপাতাল পরিদর্শন করে ওই স্থানটিকে “ডেথ জোন” বা "মৃত্যুপুরী" বলে আখ্যা দেয়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ওই হাসপাতালটি দখলে নেওয়ার পর এবং মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়ার পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ দলটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে।
যৌথ দলটি এক ঘণ্টার জন্য হাসপাতালের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে এবং তারা জানায় যে তারা হাসপাতালের ভেতরে গোলা বর্ষণ ও গোলাগুলির আলামত পেয়েছে।
একইসাথে হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে একটি গণকবর দেখা গেছে। সেখানে অন্তত ৮০ জনের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আল-শিফা হাসপাতাল থেকে সবাইকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরও সেখানে অন্তত তিন শ’ জন গুরুতর অসুস্থ রোগী থেকে গিয়েছেন - এটি গাজার সবচেয়ে বড় এবং উন্নত হাসপাতাল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ দল বলেছে যে তারা গাজায় অবশিষ্ট রোগী এবং কর্মীদের জরুরিভাবে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
হাসপাতালের একজন সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন, যেসব "রোগী নড়া-চড়া করতে পারে না এবং খুব অল্প সংখ্যক চিকিৎসক" হাসপাতালে রয়ে গিয়েছেন।
আল-শিফায় থাকা এক সাংবাদিক খাদের বলেছেন, "আমরা আমাদের হাত তুলে সাদা পতাকা উড়িয়েছি।"
"গত রাতটি খুব কঠিন ছিল। ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি বুলডোজার দিয়ে হাসপাতালের আঙিনায় বিশাল গর্ত তৈরি করা হয়েছে। কয়েকটি ভবন ধসে গেছে।"
ডা. রামেজ রাদওয়ান নামে এক চিকিৎসক বলেছেন যে তাকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আল-শিফা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাসপাতালের পরিস্থিতিকে "দুঃখজনক" বলে তিনি বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে হাসপাতালে কোনো ব্যথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক নেই এবং “কিছু রোগীর ক্ষতস্থান থেকে কৃমি বের হয়ে আসছে"।
সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, মিডল ইস্ট আই
এমইউ