ভারতের স্বাধীনতা দিবসে দশমবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত আগস্টে দেওয়া এ ভাষণে তিনি জানান, বর্তমান সময়টা ভারতের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার উদ্ভব হচ্ছে। আর এই ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত ভারত।
মোদি এ সময় তার দেশের জনসংখ্যা, গণতন্ত্র ও বৈচিত্র্যতাকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, ‘ভারত থেকে বের হওয়া আলোর রশ্মিতে সমগ্র বিশ্ব আলোকিত হবে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ইয়েমেনে ভারতীয় নার্সকে ফাঁসির আদেশ
এ বিষয়ে দ্যা ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ভারতের জন্য একটি টার্নি পয়েন্ট হতে পারে। কারণ, মোদি যখন প্রথমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তারা ছিল বিশ্বের ১০ম অর্থনীতির দেশ। এখন ভারত বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ। ২০২৭ সালের মধ্যে দেশটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইসাথে ভারত হবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
কিন্তু তারপরেও ঘরে বাইরে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নরেন্দ মোদিকে। অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নের। তাছাড়া ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের কোণঠাসা করে রাখারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আগামী বছরগুলো ভারতের গণতন্ত্র আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সম্পর্ক খারাপ হতে পারে পশ্চিমাদের সঙ্গেও।
বিজেপির অন্যান্য নেতারা অবশ্য গণতন্ত্র ক্ষয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এসব নেতাদের দাবি মোদিকে ভারতের ৭৮ শতাংশ লোক সমর্থন দিয়েছে। তাছাড়া তার সরকার অবকাঠামো ও দুর্নীতিসহ সব সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে, যা কংগ্রেসের আমলে প্রবৃদ্ধিতে বাধা ছিল। স্বাধীনতার পর ৭৬ বছরের মধ্যে ৫৫ বছরই ভারতের শাসন ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। বিজেপির দাবি তাদের হিন্দুত্ববাদের উদ্দেশ্য মুসলমানদের কোণঠাসা করা নয় বরং ভারতের পরিচয়কে পুনরুদ্ধার করা।
বিজ্ঞাপন
যদিও দেশটির বিরোধী দলের রাজনীতিবিদরা বলছেন, মোদি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার করে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান ক্ষুন্ন করছেন এবং ১৪ শতাংশ মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও সহিংসতা উস্কে দিয়েছেন। তারা মোদির বিরুদ্ধে সমালোচকদের হয়রানি, সাংবাদিকদের চাপে রাখা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ এনেছেন।
আরও পড়ুন: ভারতে ৬ দিন ধরে টানেলে আটকা ৪১ শ্রমিক, বাড়ছে ক্ষোভ
দ্যা ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত নির্বাচনে ৫৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩০৩টিতে জয়লাভ করে। বর্তমানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণসহ ২৮টি রাজ্যের মধ্যে অর্ধেকের বেশির দখল বিজেপির হাতে। তবে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে বিজেপির প্রভাব কম। সম্প্রতি কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধীরা নতুন জোট গঠন করেছে। এতে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিজেপি।
অন্যদিকে অনেক বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমা দেশগুলো মোদির সমালোচনা করতে অনিচ্ছুক। বিশেষ করে চীনকে মোকাবিলার ক্ষেত্রে ভারতকে অন্যতম অংশীদার মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। গত জুনে মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রতিরক্ষা চুক্তিকে অগ্রাধিকার দেন বাইডেন।
যদিও পশ্চিমা কিছু কর্মকর্তা ভারতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাছাড়া ভারতের বিরুদ্ধে কানাডায় শিখ নেতাকে হত্যার অভিযোগের পর উদ্বেগ আরও বেড়েছে। যদিও কানাডার অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করছে দিল্লি।
স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মোদি দাবি করেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত উন্নত দেশে পরিণত হবে। তবে অভ্যন্তরীণ সমালোচকদের মতো বিদেশিদেরও প্রশ্ন— এই উন্নতি কীভাবে হবে? ভারতের গণতন্ত্রের অবস্থাই বা কী হবে?
সূত্র : দ্যা ইকোনমিস্ট
এমইউ