গাজায় ফিলিস্তিনিদের হাতে আরও ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। গাজা উপত্যকার যুদ্ধে নিহত দুই সেনার নাম জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় স্থল অভিযানের সময় আরও দুই সৈন্য নিহত হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৪৬ ইসরায়েলি সেনা সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে মারা গেছেন।’
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিহত ইসরায়েলি সেনাদের নাম রোই মারোম (২১) ও রাজ আবুলাফিয়া (২৭)। স্টাফ সার্জেন্ট রোই মারোম ছিলেন ৯০৬ ব্যাটালিয়নের একজন স্কোয়াড কমান্ডার। অপরদিকে রাজ আবুলাফিয়া ছিলেন ৬৮৬৩ ব্যাটালিয়নের একজন মেজর।
আরও পড়ুন: আবারও লেবানন থেকে ইসরায়েলে হামলা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
ইসরায়েল এবং হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড গাজা শহরের চারপাশে ভয়ঙ্কর শহুরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার হামাস একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে যে ফিলিস্তিনি যোদ্ধরা বোমা বিধ্বস্ত ভবনগুলোতে লুকিয়ে আছে। তারা রকেট চালিত গ্রেনেড ও বাজুকা দিয়ে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং সৈন্যদের ওপর হামলা করছে।
বিজ্ঞাপন
মিডল ইস্ট আই স্বাধীনভাবে এ ভিডিও বা এর তারিখ এবং অবস্থান যাচাই করতে পারেনি।
বিবিসি জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই চলছে। গত কয়েক দিন ধরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর স্থল হামলা জোরদার হওয়ার পর থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে সংঘাতের তীব্রতা বেড়েছে।
উত্তর গাজার শহর গাজা সিটির হাসপাতালগুলোর আশেপাশে সংঘাতের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি নারী সেনা আটক
হাসপাতালগুলোর আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েক দিন ধরে তীব্র সংঘাত চলার কারণে কয়েকটি হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুশিয়ার করে বলেছে, গাজায় থাকা সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা এখন প্রায় ‘একটি কবরস্থান’। যার ভেতরে এবং বাইরে মরদেহ জড়ো করে রাখা হয়েছে। আল শিফা ‘আর হাসপাতাল হিসেবে কাজ করছে না।
ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত বোমা হামলা ও স্থল আক্রমণ চলতে থাকায় গাজার আরও কয়েকটি হাসপাতালও একই পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালে এত দিন বোমা না ফেললেও হাসপাতালটির ৫০ থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ধরেই বোমা হামলা করে আসছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
তবে গত কয়েক দিন ধরে ওই হাসপাতালের ভেতরে থাকা স্থাপনায় বোমা হামলা করার পাশাপাশি হাসপাতালের আশেপাশে স্থল হামলার তীব্রতাও বাড়িয়েছে তারা।
রোবববার জাতিসংঘ জানিয়েছে অক্সিজেন প্রস্তুতকারী যন্ত্র, পানির ট্যাংক, ম্যাটার্নিটি ওয়ার্ড ও হৃদরোগ বিভাগ-সহ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বোমা হামলায় ধ্বংস হয়েছে।
চলমান সংঘাতের মধ্যে রোববার ওই হাসপাতালের তিনজন নার্সও মারা গেছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ১০১ জন জাতিসংঘ কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে নজিরবিহীন সামরিক অভিযান চালায়। সেদিন থেকেই ইসরায়েলের বিমানবাহিনী গাজায় ভয়াবহ রক্তাক্ত অভিযান শুরু করে যা এখন পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলছে।
ইসরায়েলে সামরিক অভিযানের বিষয়ে আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নৃশংসতার জবাবে এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এবং আমাদের পবিত্র স্থাপনা আল-আকসায় ইসরায়েলি নৃশংসতা বন্ধে উদ্যোগ নেবে। এগুলোই হামাসের এই অভিযানের কারণ।’
সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, মিডল ইস্ট আই
এমইউ