শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে গাজা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৬ এএম

শেয়ার করুন:

জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে গাজা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
গাজার উঁচু ভবনগুলো মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

গাজায় জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় আসন্ন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। অতিরিক্ত ভিড়, ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামোর ক্ষতির কারণে এই ঝুঁকি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমায়ার মঙ্গলবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এটি একটি আসন্ন জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় যা ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি, অতিরিক্ত ভিড়, জল ও স্যানিটেশন অবকাঠামোর ক্ষতির সাথে জড়িত। খবর আল জাজিরার


বিজ্ঞাপন


ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমা হামলায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাজায়। এছাড়াও বিভিন্ন সংকটের কারণেও অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন  ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমায়ার। 

লবণাক্ত পানি পানে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ডিহাইড্রেশনের কারণে শিশু মৃত্যু, বিশেষ করে ডিহাইড্রেশনের কারণে নবজাতক শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।'

তিনি বলেন, গাজায় প্রায় ৯৪০টি শিশু নিখোঁজ রয়েছে এবং তাদের কেউ কেউ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: সবটাই ফিলিস্তিন, চীনের অনলাইন ম্যাপে নেই ইসরায়েল


বিজ্ঞাপন


জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক দফতর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, অজ্ঞাত কারণে গত ৩০ অক্টোবর গাজার দক্ষিণাঞ্চলে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস ২৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, গাজাতে ইসরায়েলের অবরোধ আন্তর্জাতিক মানবতা আইনের স্পষ্ট লংঘন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৮ হাজার ৫২৫ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

gaza_2
রাফাতে একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন ফিলিস্তিনি নারী। ছবি: এএফপি

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৩ হাজার ৫৪২ জন শিশু। নিহত নারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া এ বর্বর হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ২১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত হয়েছেন।

এর আগে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল ৫৩টি গণহত্যা চালিয়েছে।

ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত গাজা। সেখানে তীব্র মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধের কারণে খাবার, পানিসহ জরুরি পণ্যের মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় গর্ভবর্তী নারী, শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ লবণাক্ত ও দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে গাজার হাজার হাজার মানুষের নোনা ও দূষিত পানি পান করার বিষয়ে বিশদ বিবরণ উঠে এসেছে। ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ এই খবর দিয়েছে।

হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর রিপোর্ট করেছে যে, গাজায় প্রায় ৫২ হাজার গর্ভবতী নারী এবং ছয় মাসের কম বয়সী ৩০ হাজারের বেশি শিশুকে লবণাক্ত বা দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে।

আরও পড়ুন: গাজার সব মানুষকে তাড়িয়ে সিনাইয়ে পাঠাতে চায় ইসরায়েল: নথি ফাঁস

ইসরায়েল গাজার জনগণের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। পানি সংকটের কারণে তৃষ্ণা নিবারণ ও কলেরাসহ সংক্রামক রোগের আশঙ্কা করছেন গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় হাজার হাজার ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। বিশাল অবরুদ্ধ এই উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইসরায়েলি সরকারের একটি মন্ত্রণালয় গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনিকে মিশরের সিনাই উপদ্বীপে স্থানান্তর করার জন্য একটি যুদ্ধকালীন প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে। সেটি একটি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন এবং কায়রোর সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

ইসরায়েল গাজাকে মিশরের সমস্যায় পরিণত করতে এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর ১৯৪৮ এর স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চায়। সেই সময় লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করে ইসরায়েল। সেই একই পরিকল্পনা আবারও নিয়েছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ রিপোর্ট সম্পর্কে বলেছেন, 'আমরা যেকোনো জায়গায়, যেকোনো রূপে হস্তান্তরের বিরুদ্ধে। আমরা এটিকে একটি লাল রেখা বলে মনে করি যা আমরা অতিক্রম করতে দেব না। ১৯৪৮ আর ঘটতে দেওয়া হবে না।'

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর