ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট চলছে। ভেঙে পড়েছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা। মুহুর্মুহু বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। বোমা হামলার পরই গাজায় আলোর দেখা মিলছে। শুক্রবার রাতে বোমাবর্ষণের পাশাপাশি স্থল হামলা আরও জোরদার করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে গাজা পুরো পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।
আল জাজিরার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, গত কয়েক ঘণ্টায় গাজায় বিরামহীন বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই গাজায় এবার নেমে এসেছে যোগাযোগ বিপর্যয়। ভেঙে পড়েছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ‘৪৯ শতাংশ ইসরায়েলি গাজায় কোনো হামলা চায় না’
আল জাজিরার সাংবাদিক সাফওয়াত আল-কাহলুত গাজা থেকে বলেন, 'বোমা হামলা যে হারে বেড়েছে, এতে যোগাযোগ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মনে হচ্ছে আজ রাতে বড় কিছু ঘটতে চলেছে।'
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালক মারওয়ান জিলানি অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা থেকে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রায় দুই ঘণ্টা আগে গাজায় তাদের দলের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ হারিয়েছে।
গাজার খান ইউনিস এলাকায় কর্মরত আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম বলেন, 'গাজার মানবিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এখানকার ২৩ লাখ মানুষ বর্তমানে পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তারা আত্মীয় বা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।'
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ ও আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অ্যাকশনএইডও জানিয়েছে যে, গাজায় তাদের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিন টেলিযোগাযোগ কোম্পানি (প্যালটেল) ও ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ নেটব্লকস পৃথক বিবৃতিতে গাজায় তাদের নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের কথা জানিয়েছে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হামজা ইউসেফ জানিয়েছেন যে, তিনি গাজায় তার পরিবারের সদস্যদের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না।
এদিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড বলছে, তারা বেইত হানুন ও বুরেজের পূর্বে ইসরায়েলি স্থল অনুপ্রবেশকে ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে সংঘর্ষ এখনো চলছে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওসামা হামদান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েল বিজয়ের ছবি তৈরির চেষ্টা করছে। গাজা উপত্যকার সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা ইসরায়েলি দখলদারত্বের অপরাধগুলোকে কোনো তদারকি বা জবাবদিহিতা ছাড়াই ধামাচাপা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।
আরও পড়ুন: মরবো তবুও পালাব না, বলছে গাজাবাসী
অপরদিকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও এএফপিকে বলেছে যে, তারা গাজায় তাদের সাংবাদিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারবে না।
বিবিসি সাংবাদিকরা বলছেন, আগের তুলনায় সেখানে আরও ভারি বোমা বর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েল। বেশির ভাগ বোমা হামলা চালানো হচ্ছে বিমান থেকে। এর পাশাপাশি শুক্রবার রাত থেকেই ইসরায়েলি স্থলবাহিনী গাজায় বিস্তৃত পরিসরে অভিযানে নেমেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এর মুখপাত্র নিরাপত্তার জন্য গাজার উত্তরের বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যেতে বলেছেন। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের বিমান বাহিনী ব্যাপকভাবে মাটির নিচের বিভিন্ন নিশানায় আক্রমণ শানাচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, 'সম্প্রতি কয়েক ঘণ্টায় আমরা গাজায় হামলা বাড়িয়েছি। বিমান বাহিনী মাটির নিচের নিশানা এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক বোমাবর্ষণ করছে। গত কয়েকদিন ধরে আমাদের চলমান এই আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে স্থলবাহিনীও এই সন্ধ্যা থেকে স্থলভাগে বিস্তৃত পরিসরে অভিযান শুরু করছে।'
সামরিক লক্ষ্য হাসিল করতে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস সব দিকেই শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে কাজ করছে বলে জানান হ্যাগারি। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিবিসির এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ইসরায়েল স্পষ্টতই গাজায় তাদের তৎপরতা বাড়াচ্ছে। এতে আরও মানুষ মারা পড়বে তাতে সন্দেহ নেই।
হামাস গত ৭ অক্টোবরের হামলায় চালিয়ে ১ হাজার ৪০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২২৪ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। এরপর ইসরায়েল গাজায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে। নারী, শিশুসহ সাধারণ মানুষকে অকাতরে হত্যা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত গাজায় ৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
একে