শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

এক চোখ, পা হারানো দেইফেই আতঙ্কিত ইসরায়েল!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

এক চোখ, পা হারানো দেইফেই আতঙ্কিত ইসরায়েল!
মোহাম্মদ দেইফের পুরোনো ছবি: এএফপি

ইতিহাসের ভয়ানক হামলার শিকার হয়েছে ইসরায়েল। মাত্র ২০ মিনিটে ৫ হাজার রকেট ছুড়ে ইসরায়েলের শক্তিশালী আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নাজেহাল করে দিয়ে বিশ্বে আলোড়ন ফেলেছে হামাস যোদ্ধারা। হামাস যে এমন কৌশলে ও এত বড় হামলা চালাতে পারে এটি কল্পনা করেনি ইসরায়েল। জানা গেছে, এই হামলার কৌশল ও পরিকল্পনাকারী হলেন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাশিম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফ।

মোহাম্মদ দেইফের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অবশ্য অজানা। তবে আল জাজিরা, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তাকে নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


মোহাম্মদ দেইফকে পাঁচ বার গুপ্ত হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে ইসরায়েল। একবার অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও এক পা ও এক চোখ হারান। এরপর থেকে চলাফেরা করেন হুইল চেয়ারে। সর্বশেষ ২০২১ সালেও তাকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ইসরায়েলের বিমান হামলায় সাত মাসের ছেলে, তিন বছরের মেয়ে ও স্ত্রীকে হারিয়েছেন। তিনি হামাসের সামরিক শাখা আল-কাশিম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফ।

মোহাম্মদ দেইফ গত শনিবার ইসরায়েলে অতর্কিত হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। গত কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' ব্যক্তিদের তালিকায় সবার ওপরে আছে তার নাম।

মোহাম্মদ দেইফ সম্পর্কে নতুন করে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তার জন্ম ১৯৬৫ সালে গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে। জন্মের পর তার নাম রাখা হয় মোহাম্মদ মাসরি। গাজা তখন মিসরের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ফিলিস্তিনে নিহত ২৩০০, মৃত্যুপুরী গাজা


বিজ্ঞাপন


১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার সংগ্রাম 'ইন্তিফাদা' শুরুর পর হামাস প্রতিষ্ঠিত হলে মোহাম্মদ মাসরি তাতে যোগ দেন। হামাসে তিনি মোহাম্মদ দেইফ নামে পরিচিত হন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেইফ দ্রুত হামাসের সামরিক ইউনিট, আল-কাশিম ব্রিগেডে জনপ্রিয়তা পান।

হামাসের একটি সূত্র জানায়, দেইফ ১৯৮৯ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। ওই দফায় প্রায় ১৬ মাস কারাবন্দি থাকেন তিনি। হামাসের নেতা হয়ে ওঠার পর দেইফ বোমা তৈরি ও মাটির নিচে সুড়ঙ্গের জাল বিস্তারের কাজ শুরু করেন।

দেইফ গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেছেন। শিল্পকলার অনুরাগী দেইফ তার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনোদন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান ছিলেন এবং মঞ্চে অভিনয় করতেন।

সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, আল-কাশিম ব্রিগেডের কমান্ডার দেইফ এবং গাজায় হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার যৌথভাবে এই হামলার ছক কষেন। তবে এক্ষেত্রে দুই জনের মস্তিষ্ক কাজ করলেও মাস্টারমাইন্ড ছিলেন একজনই। হামাসের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান আলী বারাকা বলেন, আমরা দুই বছর ধরে এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।

রেকর্ড করা বক্তব্যে শান্ত কণ্ঠে দেইফকে বলতে শোনা যায়, ফিলিস্তিনিদের ওপর যে অপরাধ চলছে, হামাস তা বারবার বন্ধ করতে বলেছে। ফিলিস্তিনের দখলদারিত্বের অবসান এবং বন্দিদের মুক্তি দিতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

'ইসরায়েলি দখলদাররা প্রতিদিন পশ্চিম তীরে আমাদের গ্রাম-শহরে হামলা চালায়। আমাদের বাড়িতে হামলা করে হতাহত করা হয়, অথবা আটক করা হয়। আমাদের হাজার হাজার একর জমি তারা দখল করেছে। আমাদের জনগণকে বাস্তুচ্যুত করে অবৈধ বসতি নির্মাণ করা হয়েছে। তারা অবৈধভাবে গাজাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।'

১৯৬৭ সালে তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পশ্চিম তীরে প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা বেদখল করে ইসরায়েল। এর পর থেকে এই এলাকাটি ফিলিস্তিন সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।

এই প্রসঙ্গে দেইফ বলেন, দখলদারিত্ব বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। কিন্তু ইসরায়েল তার উসকানিমূলক কাজ চালিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিতে একটি চুক্তিতে আসার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। কিন্তু ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

আরও পড়ুন: এবার ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট হামলা হামাসের

দেইফ বলেন, আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের মহোৎসব এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের নীরবতা অবসানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।

ফিলিস্তিনিদের কাছে মোহাম্মদ দেইফ একজন লোকনায়ক। ভিডিও বার্তায় তাকে মুখোশ পরা অবস্থায় দেখা যায়। কখনো শুধু তার ছায়া দেখানো হয়। হামাসের একটি সূত্র জানায়, দেইফ স্মার্ট ফোনের মতো আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন না।

১৯৭৩ সালে আরব–ইসরায়েল যুদ্ধে পর আর কখনোই ইসরায়েলকে নিজেদের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে এতটা চ্যালেঞ্জ ও উদ্বেগের মুখে পড়তে হয়নি। শনিবারের হামলায় প্রাণ গেছে ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলির। শুরুতে কিছুটা হকচকিত হয়ে পড়লেও দ্রুত ফিলিস্তিনের গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তারা আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করে হামাসের বিরুদ্ধে। 

গাজায় মুহুর্মুহু হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এসব হামলায় গাজায় ধসে পড়ছে একের পর এক স্থাপনা। দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। প্রাণ গেছে নারী ও শিশুসহ ১২০০ এর বেশি মানুষের। যুদ্ধ শুরুর পর গাজাকে কার্যত অবরোধ করে রাখা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানায়, গাজায় চলমান ইসরায়েলি বিমান হামলায় যেসব বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, এর একটি দেইফের বাবার। হামলায় দেইফের ভাই ও পরিবারের আরও দুই সদস্য নিহত হয়েছেন।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর