সাধারণত যুদ্ধ শুরু হলে সামরিক অবস্থানে হামলা চালায় প্রতিপক্ষ। তবে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সেসবের কিছুই মানছে না ইসরায়েল। তারা যেন একেবারে সব শেষ করে দিতে হামলা করছে। বেশিরভাগ মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুলও বাদ যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরের বরাত দিয়ে দ্য ওয়াল জানিয়েছে, আস্ত শহর গাজা এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। মাস খানেক আগেও যেখানে সারি সারি বাড়ি, দোকানপাট, কারখানা আর খেজুর-আঙুরের বাগান ছিল, সেখানে এখন কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপ। বারুদের গন্ধে ভারী আকাশ। বোমারু বিমানের আওয়াজে আতঙ্ক চারদিকে।
বিজ্ঞাপন
গাজার রাস্তায় চাপ চাপ রক্তের দাগ। নিষ্প্রাণ শহরে ঠিকানা হারিয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল কিছুই অবশিষ্ট রাখছে না ইসরায়েল। শনিবার থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলায় কয়েকশ নারী-শিশুসহ ৯০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ফিলিস্তিনি।
আরও পড়ুন: নিরাপদ জায়গা বলে কিছু নেই: গাজাবাসীর আহাজারি
শনিবার থেকেই গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ দিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে খাবার, পানি, গ্যাস, বিদ্যুত এমনকি জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন অবস্থায় গাজাজুড়ে মানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ ইসরায়েলের এমন অবরোধের নিন্দা জানিয়েছে। এটিকে সরাসরি যুদ্ধাপরাধ বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫০। এছাড়া আরও পাঁচ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
অপরদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুতির ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সংস্থা বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার অগণিত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দুই লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৪ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে।
Israel pounded the Islamic University of Gaza with air strikes on October 11 as intense fighting between Palestinian group Hamas and Israel reached its fifth day, with Israel shelling civilian infrastructures in the besieged enclave, including schools, hospitals, mosques and… pic.twitter.com/J7y1JRYwVo
— TRT World (@trtworld) October 11, 2023
এ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ বলেছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় এক হাজারেরও বেশি আবাসন ইউনিট ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া গাজার লোকদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা "ক্রমবর্ধমানভাবে চ্যালেঞ্জিং" হয়ে উঠেছে।
গাজা উপত্যকায় প্রায় ২৩ লাখ লোক বাস করে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুবই বেশি। এটি বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।
গাজা এবং তার উপকূলীয় এলাকার আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে কারা যাতায়াত করবে ও কী ধরনের পণ্য প্রবেশ করতে পারবে তা তদারকি করে তারা। একইভাবে মিসরও গাজা সীমান্ত দিয়ে কারা প্রবেশ করবে তা নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনে হামলা, ইসরায়েল-আরব সম্পর্ক কোন অবস্থায়?
এদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২০০-এ পৌঁছেছে। তবে তারা বলেছে, হামাস যেখানে হামলা চালিয়েছিল সেই অঞ্চল এখন সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তবে তাদের সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে যে কিছু ফিলিস্তিনি যোদ্ধা এখনও সক্রিয় আছে এবং তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে বড় ধরনের হামলার চেষ্টায় আছে।
একে