আফ্রিকার দেশ মরক্কের বিশাল অঞ্চল শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত এগারোটার দিকে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় রাত কাটান। দেশটির রাজপ্রাসাদ তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে।
বিজ্ঞাপন
কাসাব্লাঙ্কা থেকে মারাকেশ পর্যন্ত দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভয়াবহ কম্পন অনুভূত হয়েছে। এসব এলাকায় অনেক ভবন ধ্বংস হয়েছে বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘এমন ভয়াবহতা কখনো দেখিনি’
মরক্কো জানিয়েছে যে, সশস্ত্র বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, তাবু এবং কম্বল সরবরাহ করতে উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে অনেকেই পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মারাকেশ থেকে ৭১কিমি (৪৪ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে উচ্চ এটলাস পর্বতমালায় ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল।
বিজ্ঞাপন
খবরে বলা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেক লোক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মারাকেশের হাসপাতালগুলোতে আহত লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে।
মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ভূমিকম্পে আল-হাউজ, মারাকেশ, ওয়ারজাজেট, আজিলাল, চিচাউয়া এবং তারউদান্ত প্রদেশ এবং পৌরসভাগুলোতে মানুষ মারা গেছে। এতে ১২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
মারাকেশে কিছু ভবন ধসে পড়েছে এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট মদিনার কিছু অংশে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। ঐতিহাসিক কুতুবিয়া মসজিদের মিনারের চারপাশে ধুলো দেখা গেছে। এটি পুরানো শহরের প্রধান চত্বরের কাছে একটি প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। এছাড়া ঐতিহাসিক জেমা এল ফানা মসজিদটি আংশিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
গত রাতে শহরে ভূমিকম্পের পর মারাকেশের বাসিন্দা রশিদ বেন আরাবি তার গাড়িতে ছুটে আসেন। তিনি তার স্ত্রী কন্যাকে সঙ্গে নেন। মারাকেশ থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার (৩৫ মাইল) দূরে থাকা তার বাবা-মা বেঁচে আছেন কি না সেটি নিশ্চিত করতে তিনি আমিজমিজ শহরে চলে যান। রশিদ অবশেষে তার বাবা-মাকে খুঁজে পেলেন যারা নিরাপদ এবং সুস্থ কিন্তু কম্বল জড়িয়ে রাস্তায় ঘুমাচ্ছিলেন।
আরও পড়ুন: গ্রাহকের টাকা চুরি, তুরস্কে ব্যবসায়ীর ১১ হাজার বছরের জেল
রশিদ বলেন, 'আমি একজন লোককে তার বাড়ির ধ্বংসস্তূপের কাছে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি। তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের নিচে আটকে থাকা তার দুই সন্তানের চিৎকার শুনতে পান, কিন্তু তাদের সাহায্য করার জন্য কিছুই করতে পারেননি। উদ্ধারকারী দল এখনও সেখানে পৌঁছায়নি।'
আবারও ভূমিকম্প হতে পারে এমন আশঙ্কা করে বাসিন্দাদের ঘরে ফিরে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মরক্কো সরকার। ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের ১৯ মিনিট পরে একটি ৪.৯ মাত্রার আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছিল।
শহর থেকে একটি দূরে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সেখানকার আসল চিত্র এখনও জানা যায়নি। কারণ ভূমিকম্পের কারণে দুর্গম এসব এলাকায় যাওয়ার পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
একে