মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে কেন?

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে কেন?
প্রতীকী ছবি

আধুনিক বিশ্বের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকায়নে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের প্রকোপ ও মৃত্যুর ঘটনা নিম্নতম পর্যায়ে নেমে এসেছে। বিপরীতে বেড়েছে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, কিডনি ও লিভার জটিলতার মতো অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর ঘটনা। আর এসব রোগের অন্যতম প্রভাবক ডায়াবেটিস। এটি এমন একটি রোগ যা ভুক্তভোগীকে অন্য আরও অসংখ্য রোগে আক্রান্ত হতে সহায়তা করে। ফলে একে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণহানির কারণও হতে পারে।

বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আশঙ্কার বিষয় হলো- বয়স্কদের পাশাপাশি অধিক হারে তরুণরাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এ সংখ্যা ২৬ লাখ। আর ৩৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮৪ লাখ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।


বিজ্ঞাপন


সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, এসব ব্যক্তির একটা বড় অংশই জানে না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ আবার তরুণ, যারা তাদের ডায়াবেটিস হতে পারে এটা কল্পনাও করেন না। ফলে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা ও অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকায় এসব রোগী বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।

২০২১ সালে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের এক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় এমনই চিত্র উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে অসংক্রামক রোগ’ শিরোনামের ওই সমীক্ষায় ২০ বছরের নিচে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪ জনের বেশি ছেলে-মেয়ের ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। এতে আরও দেখা যায়, নতুন শনাক্ত হওয়া ৬১ শতাংশের ডায়াবেটিসের কোনো উপসর্গ ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন–কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল কর্মসূচির অর্থায়নে পরিচালিত এ গবেষণায় অংশ নেন আট বিভাগের ১০ জেলার ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার ৪৬৮ জন। অংশগ্রহণকারীদের ৫২ শতাংশ নারী ও ৪৮ শতাংশ পুরুষ। এরমধ্যে সর্বাধিক ৫৫ শতাংশ ছিল ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে মোট আক্রান্তদের ৫০ শতাংশই জানে না তারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন। তারা ৫-৬ বছর ডায়াবেটিস চিকিৎসার আওতার বাইরে থাকেন। কারণ এই সময়ে তাদের কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। পরে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে তাদের ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। অনেকের ক্ষেত্রে তখন ডায়াবেটিস জটিল অবস্থায় চলে যায়।

Diabeticএ অবস্থায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচতে নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তারা জানান, ঘন ঘন প্রস্রাব, অধিক তৃষ্ণা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ক্লান্তি অনুভব করা, সার্বক্ষণিক ক্ষুধা, স্বল্প সময়ে শরীরের ওজন যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘন ঘন সংক্রমণের মতো লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষত যাদের পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যের ডায়াবেটিস রয়েছে। একইসঙ্গে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে স্থূলতা হ্রাস, কায়িক পরিশ্রম বা নিয়মিত ব্যয়াম করা, জাঙ্ক বা ফাস্টফুড পরিহার ও ধূমপান পরিহার করতে হবে।


বিজ্ঞাপন


ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই

ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি। ডায়াবেটিসে একবার আক্রান্ত হলে তা থেকে মুক্তির উপায় নেই। এক্ষেত্রে আশঙ্কার বিষয়- এতে আক্রান্তের হার উন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশে বেশি। এর প্রধান কারণ আমাদের জীবনযাপনে পদ্ধতির পরিবর্তন। বিশেষভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য মানুষের অভ্যাসের পরিবর্তন হয়েছে। হাঁটা-চলা ও কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়া, ভেজাল ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, কোমল পানীয় পান, ধূমপানসহ স্থুলতা বাড়ার কারণে ডায়াবেটিস বাড়ছে। এ অবস্থায় অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ত্যাগ ও সচেতন হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব হবে।

Diabeticসচেতনতা তৈরিতে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি বংশগত রোগ। ফলে কিছু লোকের ডায়াবেটিস হবেই। এ জন্য তাদের নিয়মিত ওষুধ সেবনসহ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে। তবে আশার কথা হলো, টাইপ-২ ডায়াবেটিস শতকরা ৮০ ভাগ সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। আমরা মানুষকে সচেতন করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। মসজিদের খুতবায় এ বিষয়ে বলার জন্য অনুরোধ করেছি। আমরা কাজীদের মাধ্যমে নবদম্পতিকে সচেতন করছি। এছাড়া গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে।

>> আরও পড়ুন: এত সমস্যার মূলে ভিটামিন ডি?

মানুষ কতটা সচেতন এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আজাদ বলেন, দেশের মানুষ ডায়াবেটিসের ব্যাপারে সচেতন নয় এমনটা বলা যাবে না। মানুষ সচেতন তবে পর্যাপ্ত না। তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর- এটা সকলেই জানে। ক্ষতিকর জানার পরও সিগারেট কোম্পানিগুলো কিভাবে মানুষকে এটি ভোগ করাচ্ছে? মানুষ কেন ধূমপান করছে? কারণ অবশ্যই তারা মানুষকে কোনো না কোনোভাবে এতে আকৃষ্ট করছে। আমরা মানুষকে ডায়াবেটিসের বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু যেভাবে প্রচার করলে সফল হবে সেভাবে বা সে প্রক্রিয়া প্রয়োগে হয়তো সক্ষম হইনি যার মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ হবে। অর্থাৎ আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কিভাবে মানুষকে বোঝালে তারা সচেতন হবে- এটি গবেষণার বিষয়, এটি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি একটি খারাপ উদাহরণ দিয়েছি। কিন্তু এটি একটি ফ্যাক্ট। সিগারেট ক্ষতিকর জানার পরও কোম্পানিগুলো একজন মানুষকে কিভাবে আকৃষ্ট করছে। তার মানে তারা গবেষণা করেছে যে কিভাবে মানুষকে আসক্ত করা যায়। সুতরাং আমাদেরও এমন প্রক্রিয়া বের করতে হবে যা করলে মানুষ আমাদের কথা শুনবে।

এমএইচ/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর